স্ত্রী করা নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও সভাপতি ড. সঞ্জয় কুমার সরকারকে জেলে পাঠিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) নাটোর জর্জ কোর্টে বিচারক মুহাম্মদ আব্দুর রহিম তার জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১ (গ) ও ৩০ ধারায় তার স্ত্রীর করা মামলার শুনানিতে জামিন নামঞ্জুর করে এ রায় দেন আদালত।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৫ সালের মার্চ মাসে সঞ্জয় ও জয়ার বিয়ে হয়। এ সময় বাদীর (জয়া) কল্যাণের কথা চিন্তা করে তার বাবা নগদ ২৫ লাখ টাকা, ২০ ভরি স্বর্ণালংকার, টিভি, ফ্রিজসহ প্রয়োজনীয় যাবতীয় ফার্নিচার দেন সঞ্জয়কে। তবে বিয়ের পর থেকেই আরও টাকার জন্য চাপ দেওয়ায় তাদের উভয়ের মধ্যে মনোমালিন্য হয় । এরই জেরে জয়া সাহা বিভিন্ন সময় তার স্বামী সঞ্জয় সরকার দ্বারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। একইসঙ্গে জয়াকে যৌতুকের টাকার জন্য মারধর শুরু করেন সঞ্জয়।
২০২৩ সালে জুনে আবারও ১০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। পরে জয়া টাকা আনতে অপারগতা জানালে তাকে ও তার সাড়ে চার বছরের শিশু সন্তানসহ জোরপূর্ব শ্বশুরবাড়ি নাটোরে রেখে যান সঞ্জয়। তারপর থেকে উভয়েই এক বছরের বেশি সময় আলাদা থাকছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাাডভোকেট আনিসুর রহমান বলেন, ‘সঞ্জয় সরকারের স্ত্রী তার নামে যৌতুক ও নারী নির্যাতন আইনে মামলা করেছিলেন। মামলাটি পরে জুডিশিয়াল তদন্ত হয়। এতে ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে যৌতুক নেওয়া, তাকে মারধর, নির্যাতনের সত্যতা পান। পরে বিচারক সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তখন সে এসে আপোষের কথা বলে অস্থায়ী জামিন নিয়ে যান। কিন্তু আজ পর্যন্ত আপোষ না করায় আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।’
এ বিষয়ে ড. সঞ্জয় কুমারের আইনজীবী একেএম শাহজাহান কবীর বলেন, ‘আমার জানা মতে তিনি তার স্ত্রীকে গ্রহণ করতে চান। কিন্তু তার স্ত্রী সংসার করতে রাজি নন। এটা দ্রুত জামিনযোগ্য মামলা না হলেও আপোষযোগ্য। আমরা আগামী রোববার (১ সেপ্টেম্বর) ফের জামিনের চেষ্টা করব।’
জয়ার বাবা রতন সাহা বলেন, গত বছরের নভেম্বর মাসে জয়াকে নাটোরের রেখে যায় সঞ্জয়। এরপরে বারবার তাগাদা দিলেও টাকা না দিলে জয়াকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যাবে না বলে জানানো হয়। এমনকি সঞ্জয়ের বাবা সুশান্ত সরকারের সঙ্গেও যোগাযোগ করলে তারা অপারগতা প্রকাশ করেন।
ড. সঞ্জয় কুমার সরকারের স্ত্রী জয়া সাহা বলেন, ‘এত নির্যাতন করে ফের যৌতুকের টাকা দিয়ে ওই সংসারে ফিরলে তার নিরাপত্তা কোথায়। এর আগেও সঞ্জয় আমাকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। সন্তানসহ আবার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অমানবিক নির্যাতনের ফলেই তাকে কারাগারে যেতে হয়েছে। আমি কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। আমি তার উপযুক্ত শাস্তি চাই।’
এছাড়াও সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মেয়ে শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি এবং বহু নারীর সঙ্গে তার প্রেম এবং অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।
মন্তব্য করুন