‘প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ঘরে পানি, খাবার নেই, বাচ্চা দুটি নিয়ে খুব কষ্টে আছি। আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা পাইনি, অন্যের ঘরে থাকি। আবার সে ঘরের সামনেও পানি। বাইরে থেকে আসা কোনো ত্রাণ আমরা পাই না। বাচ্চাদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি।’
চলমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে দুর্দশাগ্রস্ত এক গৃহবধূ সাবিনার আর্তনাদ ছিল এমনই। সাবিনা লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের ১ নম্বর যাদৈয়া গ্রামের কাদির হাজী বাড়ির বাসিন্দা। তার দুই কন্যা সন্তান। বড় মেয়ের বয়স ৭ বছর, আর ছোট মেয়ের বয়স এক বছর। সাবিনার স্বামী কামাল হোসেন নির্মাণ শ্রমিক। বন্যার কারণে আপাতত আয়-উপার্জন বন্ধ তার।
জানা যায়, তার ঘরে চাল নেই। ছোট্ট শিশু কন্যার জন্য পর্যাপ্ত খাবারও নেই। সাবিনাদের বাড়ির আশপাশে স্বেচ্ছাসেবীরা ত্রাণ নিয়ে এলেও তারা ঘরে বসবাস না করায় কখনো এসবের দেখা পাননি।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে সাবিনার বাড়ি গিয়ে দেখা যায়- ঘরে হাঁটু পানি। উঠানে এবং বাড়ির রাস্তায় কোমরের চেয়ে বেশি পানি। এক সপ্তাহ আগে টিনশেড ঘরটি বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। দীর্ঘদিন পানির নিচে তলিয়ে থাকায় ঘরটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই ঘরে থাকার মতো পরিবেশ নেই, আশ্রয় নিয়েছেন এক প্রতিবেশীর ভবনে। ওই ভবনের চারপাশেও এখন পানি৷
সাবিনার স্বামী কামাল হোসেন বলেন, বাচ্চাদের খাবার দিতে পারি না৷- পকেট ফাঁকা, ঘরে একমুঠো চালও নেই। থাকার মতো কোনো জায়গা নেই। সব ত্রাণ আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে যায়। আমরা পাই না।
সাবিনার সঙ্গে ত্রাণের সন্ধানে রাস্তায় নেমে আসা আরেক নারী নাসরিন বলেন, ঘরে হাঁটুপানি। কোনো খাবার নেই। ত্রাণ আসে, কিন্তু আমাদের দেয় না। মুখ দেখে লিস্ট করে নামে নামে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের নাম কেউ দেয় না।
ত্রাণবঞ্চিত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সাবিনাদের বাড়ির বৃদ্ধা নারী ঝুনি বেগম বলেন, পানিতে ভাসি। আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই হয়নি। ত্রাণও পাই না। এখান দিয়ে নিয়ে যায়। জিজ্ঞেস করলে বলে- নাম লিস্ট করে আনছি, আপনার নাম নেই। কীভাবে তালিকা হয়, আমার অবস্থা কী তারা দেখে না?
মন্তব্য করুন