মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১২:৪৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

তিন মাস পর উঠছে সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

নৌকা মেরামতে ব্যস্ত বনজীবীরা। ছবি : কালবেলা
নৌকা মেরামতে ব্যস্ত বনজীবীরা। ছবি : কালবেলা

তিন মাস পর আগামী এক সেপ্টেম্বর থেকে খুলছে সুন্দরবন। ফলে সুন্দরবনে প্রবেশে পর্যটক, মৎস্য এবং সুন্দরবনের বনজ সম্পদের ওপর নির্ভরশীল জেরে বাওয়ালিদের থাকছে না নিষেধাজ্ঞা।

এদিকে, সুন্দরবনের প্রবেশের দিন ঘনিয়ে আসায় শুরু হয়েছে নৌকা ও জাল মেরামতের তোড়জোড়। সবকিছু ঠিক থাকলে মাছ ও কাঁকড়া ধরার জন্য ১ সেপ্টেম্বর থেকে সুন্দরবনে যেতে পারবেন বনজীবীরা।

সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সিগঞ্জ, কৈখালী ও রমজাননগর এলাকা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সুন্দরবন সংলগ্ন চুনা, চুনকুড়ি, মালঞ্চ ও খোলপেটুয়া নদীর পাড়ে পুরোনো নৌকা, ছেড়া জাল মেরামত ও রঙ করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন বনজীবীরা। এসব এলাকার প্রায় ১০ হাজার জেলে পরিবার সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে নদীতে মাছ ও কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। তারা দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে চলায় চারদিকে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। তাদের মুখে বইছে হাসির ঝিলিক।

শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী এলাকার ষাটোর্ধ্ব হানিফ গাজী ছোটবেলা থেকেই মাছ ধরার পেশায় জড়িত। সুন্দরবনের নদ-নদীতে মাছ-কাঁকড়া ধরা নিয়ে তার রয়েছে নানান অভিজ্ঞতা।

তিনি বলেন, যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই বাদায় (সুন্দরবনে) মাছ-কাঁকড়া ধরার কাজে জড়িত। এখন পর্যন্ত এ পেশায় আছি। বছরের দুটি সময় মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। তখন আমাদের অন্য কাজ করে সংসার চালাতে হয়। মাছ ধরা শুরুর আগে ঋণ করে নৌকা মেরামত ও জাল কিনে নদীতে নামি। তবে মাছ পাওয়ার বিষয়টি অনেক সময় ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে। নদীতে নামলে অনেক সময় মাছ পাওয়া যায়, আবার অনেক সময় খালি হাতে ফিরতে হয়।

নীলডুমুর এলাকার ওয়াহেদ গাজীর (৬০) জানান, নিষেধাজ্ঞা দিলে আমরা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকি। তবে এ সময় সরকার থেকে যে সহায়তা দেওয়া হয় সেটি দিয়ে সংসার চলে না। এ কারণে অন্য কাজ করে উপার্জন করি। সরকার সুন্দরবনের মাছ ও কাঁকড়া রক্ষায় যে অভিযান চালায় সেটি আরও কঠোর এবং নেট জাল ও কারেন্ট জালের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধসহ অবৈধভাবে সুন্দরবনে চোরা শিকারিদের প্রবেশ বন্ধ করা দরকার। তাহলে সুন্দরবনের নদ-নদীতে মাছ কাঁকড়া পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।

একই এলাকার আবু হাসান সরদার (৪৫), জামাল হোসেন (৩৫), রফিকুল সরদার (৪০)। তারা নদীতে নামার জন্য জাল ও নৌকা মেরামতের কাজ করছেন। তারা জানান, তিন মাস সুন্দরবনে মাছ কাঁকড়া আহরণ থেকে বিরত থাকায় সংসার অনেক কষ্টে চলেছে। কারণ মাছ-কাঁকড়া ধরা ছাড়া তারা অন্য কোনো কাজ করতে পারেন না।

তারা আরও বলেন, প্রতিটি নৌকায় ২-৫ জন জেলে থাকে। পাঁচজনের পাঁচটি পরিবার। আমাদের মাছ পাওয়ার ওপর নির্ভর করে সংসার। মাছ পাওয়া গেলে সংসার ভালো চলে। না পাওয়া গেলে কষ্ট করেই চলতে হয়। অনেকে সন্তানদের নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করেন।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষা, জীবজন্তু ও মাছের প্রজনন বাড়ানোর জন্য ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৯২ দিনের জন্য সুন্দরবনের নদ-নদীতে মাছ, কাঁকড়া ধরা ও পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এর আগে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে প্রজনন মৌসুম হিসেবে বন্ধ রাখা হয়েছিল কাঁকড়া ধরা। ফলে সুন্দরবনের মাছ ও কাঁকড়া ধরার ওপর নির্ভরশীল মানুষ চরম কষ্টে ছিল।

সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ অফিস সূত্রে জানা যায়, ১ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সাতক্ষীরা রেঞ্জের চারটি স্টেশন থেকে বিএসসি (নোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট) হয়েছে ২ হাজার ৯০০টি।

বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা এবিএম হাবিবুর রহমান জানান, সাধারণত একটি নৌকায় ২-৬ জন করে মাছ কিংবা কাঁকড়া ধরতে সুন্দরবনে ঢুকে থাকেন। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবার মাছ ও কাঁকড়া ধরার অনুমতি দেওয়া হবে। এতে করে আবার কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসবে জেলেদের মাঝে।

সুন্দরবন ট্রলার মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম জানান, পর্যটকের ওপর নির্ভর করে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকায় পাঁচ শতাধিক ট্রলার চলে। সুন্দরবনে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত মাছ ও কাঁকড়া ধরা বন্ধ রাখার পাশাপাশি পর্যটক ঢোকা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় তাদের প্রায় এক হাজার ট্রলার চালক ও শ্রমিক বেকার জীবনযাপন করেন। তাদের সংসার চলে খুব কষ্টে ধারদেনা করে।

সুন্দরবন নিয়ে কাজ করা সাংবাদিক পীযুষ বাউলিয়া পিন্টু বলেন, বছরের প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া ধরা বন্ধ থাকে। মৎস্য বিভাগ প্রতিবছর মাছের প্রজনন মৌসুমে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রাখে। এই অবসরকালে সাগরে মাছ ধরা জেলেদের মাথাপিছু ৮৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। অথচ সুন্দরবনের নদ-নদীতে মাছ ও কাঁকড়া ধরে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন, তাদের জন্য কোনো সুবিধা কিংবা বরাদ্দ নেই। তিনি এ সময় বেকার হয়ে পড়া জেলে ও বাওয়ালিদের জন্য বরাদ্দের দাবি জানান।

পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এম কে এম ইকবাল হোছাইন চৌধুরী বলেন, তিন মাস পর ১ সেপ্টেম্বর থেকে জেলে ও বাওয়ালিদের সুন্দরবনে ঢোকার পাস (অনুমতি) দেওয়া হবে। এ জন্য আগে থেকে জেলে বাওয়ালির পাশাপাশি পর্যটক পরিবহনকারী ট্রলার মালিকরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কালবেলায় সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিবন্ধী রনি পেল হুইলচেয়ার

শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে হবে : আবু হানিফ

ক্রীড়াবিদ শওকত আলীর স্মরণে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল

শাহরিয়ার কবির আটক

সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

রাসূল (স.) আদর্শ ধারণ করে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে

ঝিনাইদহে নাশকতা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী সুজনের গ্রেপ্তারের খবরে বিএনপির আনন্দ মিছিল

মানিকগঞ্জে ধলেশ্বরী নদী থেকে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার

ভূমি উপদেষ্টার পরিদর্শন, হয়রানি ছাড়া নামজারি খতিয়ান পেয়ে উৎফুল্ল নাজিম  

১০

চট্টগ্রামে জশনে জুলুশে মানুষের ঢল  

১১

বন্যা পরবর্তী প্রাণী চিকিৎসায় বাকৃবি শিক্ষার্থীরা

১২

‘দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তির জন্য রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে’

১৩

নার্সের ভুলে ৩ দিনের শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ

১৪

‘স্মরণকালের সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ’ করার প্রস্তুতি বিএনপির

১৫

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত

১৬

রাত ১টার মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস

১৭

সিরাজগঞ্জে কবরস্থানে মিলল অস্ত্র ও গুলি

১৮

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে জামায়াতের নায়েবে আমিরের মতবিনিময়

১৯

২৮ থেকে ৪২তম বিসিএসের বঞ্চিত সেই ক্যাডাররা ফের বঞ্চনার শিকার

২০
X