মুন্সীগঞ্জ শহরের সুপারমার্কেট এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শহরের উত্তর ইসলামপুরের বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ ওরফে ডিপজলকে গুলি করে হত্যার দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও জেলার সাবেক তিন এমপিকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।
এই মামলায় আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাসহ ৩১৪ জনের নাম রয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ২০০/৩০০ জনকে।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সকাল ৯টার দিকে সদর থানায় মামলাটি দায়ের হয়। এতে বাদী হয়েছেন নিহত নুর মোহাম্মদ ওরফে ডিপজলের নানি শেফালি বেগম।
বাদীপক্ষের দায়েরকৃত এজাহারে বলা হয়, আসামিদের এমন কাজে কতিপয় দুর্নীতিবাজ ও দলীয় নিয়োগপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য সহায়তা করে।
এর আগে গত ২০ আগস্ট একই ঘটনায় রিয়াজুল ফরাজীকে গুলি করে হত্যার দায়ে মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফয়সাল বিপ্লবকে প্রধান আসামি করে ২০৮ জনের নামোল্লেখসহ ৫০৮ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়। ওই মামলার বাদী হন আন্দোলনে নিহত রিয়াজুল ফরাজীর স্ত্রী রুমা বেগম।
সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম মামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে মামলার আসামিদের বিষয়ে তিনি তথ্য দিতে রাজি হননি।
অন্য একটি সূত্রমতে, ঘটনার নির্দেশদাতা হিসেবে আসামিরা হলেন- মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক শেখ লুৎফর রহমান মহিউদ্দিনের ছোট ভাই সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনিস উজ্জামান, মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফয়সাল বিপ্লব (জানুয়ারি ২০২৪-আগস্ট ২৪) ও মৃণাল কান্তি দাস (২০১৪-২০২৩), মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, যুবলীগ নেতা জালাল উদ্দিন রুমি রাজন এবং পঞ্চসার ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য জাহিদ হাসান।
এ ছাড়াও উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন- শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মতিন, পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুরুজ মিয়া, শহর ছাত্রলীগের সভাপতি নসিবুল ইসলাম নোবেল, সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাজ্জাত হোসাইন সাগর, সরকারি হরগঙ্গা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নিবির আহমেদ, ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সোহেল রানা রানু, ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মকবুল হোসেন, পঞ্চসার ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য জাহিদ হাসান, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা আব্দুর রহমান জীবনসহ এজাহারনামীয় সর্বমোট ৩১৪ জন।
প্রসঙ্গত, গত ৪ আগস্ট শহরের সুপারমার্কেটে এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে জেলা সদরের চরাঞ্চল থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, তার পুত্র সাবেক সংসদ সদস্য ফয়সাল বিপ্লবের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জন্য অস্ত্র-ককটেল নিয়ে শহরে প্রবেশ করেন ২-৩ হাজার দলীয় নেতাকর্মী ও অনুসারী।
ওইদিনের ঘটনায় ৩ জন নিহত ব্যক্তির নাম-পরিচয় পাওয়া যায়। এ ছাড়া অন্তত ৯৫ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হন দেড় শতাধিক।
আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতরা হলেন- রিয়াজুল ফরাজী (৩৮), মো. সজল (৩০) ও ডিপজল (১৯)। নিহতদের মধ্যে রিয়াজুল মৃত কাজী মতিনের ছেলে, সজল আলী আকবরের ছেলে ও ডিপজল সিরাজ সরদারের ছেলে। এরা সবাই শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা।
মন্তব্য করুন