মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের বাল্লা ইউনিয়নের ঝিটকা উজানপাড়া থেকে ভাদিয়াখোলা বাজার পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার নির্মাণাধীন পিচ ঢালাইয়ের সড়কের কাজ প্রায় ছয় মাসের অধিক সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে চরম জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই পুরো রাস্তায় পানি জমে যানবাহন তো দূরের কথা হেঁটেই মানুষ চলাচল করতে পারছে না বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। এতে দূর-দূরান্ত এলাকাসহ প্রায় ৭/৮টি গ্রামের মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক বছর আগে এই রাস্তার পাকাকরণের কাজটি শুরু করে শেখ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। দেড় বছর মেয়াদি এই প্রকল্পে এক বছরে কাজ শেষ হয়েছে অর্ধেকের মতো। শুরুতে টানা তিন চার মাস কাজ করে পুরো রাস্তায় বক্স তৈরি করে বালি ফেলে ভরাট করা হয়। এরপর বালির সঙ্গে যতসামান্য কিছু খোয়া মিশ্রণ করে যাতায়াতের উপযোগী করা হলেও প্রায় ছয় মাসের অধিক সময় ধরে বাকি কাজ বন্ধ রয়েছে।
নির্মাণাধীন রাস্তা দিয়ে নিয়মিত ভারি যানবাহন চলাচলে গাড়ির চাকায় রাস্তার দুই পাশ দেবে গেছে। ফলে একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে পুরো সড়ক অনেকটাই খালের মতো হয়ে পড়ছে। ফলে যানবাহন তো দূরের কথা হেঁটেই চলাচল করতে পারছেন না পথচারীরা।
সরেজমিন দেখা যায়, টানা বৃষ্টির কারণে পুরো রাস্তা জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। কোথাও কোথাও হাঁটু পানি। রাস্তার অনেক জায়গা ভেঙে খোয়াও চলে যাচ্ছে। রাস্তায় পানি জমে থাকায় কৃষিপণ্যসহ অন্যান্য মালামাল আনা নেওয়া করতে পারছেন না বলে জানান এলাকাবাসী।
তারা আরও অভিযোগ করেন, ছয় মাসের অধিক সময় ধরে রাস্তার কাজ বন্ধ রয়েছে। এই ছয় মাসে কোনো সরকারি কর্মকর্তা এসে রাস্তাটি পরিদর্শন করেননি এবং কাজের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগও নিচ্ছে না। হদিস মিলছে না ঠিকাদারেরও। মাঝে মাঝেই এ রাস্তা দিয়ে রাতের বেলা বড় বড় ড্রাম ট্রাকে বালু বহন করায় রাস্তাটি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামের নসিমন চালক সোহেল রানা জানান, আজ ছয় মাস ধরে রাস্তার এমন অবস্থা। একটু বৃষ্টি নামলেই সারা রাস্তায় পানি জমে যায়। এতে আমরা গাড়িতে মালামাল বহন করতে পারছি না। রাস্তার কাজটা দ্রুত শেষ করা না হওয়ায় আমরা খুব ভোগান্তিতে আছি।
খেরুপাড়া গ্রামের রিপন জানান, ছয় মাস ধরে আমরা কষ্ট করছি রাস্তা নিয়ে। ঠিকাদারের কোনো খবর নাই। সরকারি অফিসের কোনো কর্মকর্তাও এ পর্যন্ত সড়কের কাজ কতটুকু হলো তা নিয়ে খোঁজখবর রাখছেন না। আমরা খুব কষ্টে চলাফেরা করছি। একটু বৃষ্টি হলেই মালামাল আনা নেয়া করা যায় না। কোনো ভ্যান রিক্সা চলাচল করতে পারে না। আমাদের দাবি দ্রুত সড়কটির কাজ শুরু করা হোক।
একই গ্রামের তালিব হোসেন জানান, এক বছর আগে সড়কটির কাজ শুরু হয়। টানা তিন চার মাস কাজ চলে। আধা নির্মিত রাস্তা দিয়ে ছোট-বড় যানবাহন চলাচলে রাস্তার দুই পাশ নিচু হয়ে গেছে। এতে বৃষ্টি নামলেই হাটু পানি জমে যায়। কী কারণে আর রাস্তার কাজ চলছে না তা জানি না। তবে ঠিকাদারেরও কোনো হদিস নেই। এলজিইডিরও কোনো কর্মকর্তা কখনো এসে দেখল না সড়কটির কী অবস্থা। এটা জনগুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২৩/২৪ অর্থ বছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে জিডিবি-৩ প্রকল্পের আওতায় এক কোটি ৭ লাখ ৫৮ হাজার ৫৫৬ টাকায় শেখ এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান রাস্তাটির পাকাকরণের কাজ শুরু করে।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার রাসেল কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকায় আমরা কাজটি করতে পারিনি। তবে আমরা এখন দ্রুত কাজ শুরু করে শেষ করে দিব।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী মাজহারুল হক আকন্দ কালবেলাকে জানান, সড়কটির কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় আমরা কাজ শুরু করার জন্য ঠিকদার প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার তাগাদা দিয়েছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করলে আমরা আবার রি টেন্ডার দেওয়ার ব্যবস্থা করব।