লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ গ্রামের গৃহবধূ রাবেয়া বেগম। পানিবন্দি হয়েও স্বামী-সন্তানসহ এখনো নিজ ঘরে অবস্থান করছেন তিনি। ঘর ছেড়ে গেলে গৃহস্থালির মূল্যবান আসবাবপত্র চুরি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তার। তিনি বলেন, আমার ঘরসহ চারপাশ পানিতে ডুবে আছে। চুরির আতঙ্কে আমরা ঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছি না। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ার কারণে আমরা কোনো সহায়তাও পাচ্ছি না।
রাবেয়ার পরিবারের মতো জেলার বিভিন্ন এলাকায় এরকম আরও অনেক পরিবার পানিবন্দি হয়েও নিজেদের ঘর আঁকড়ে পড়ে আছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে না পারার কারণে দৈনন্দিন ক্ষুধা নিবারণে সীমাহীন সংকটেও আছেন তারা। এদের সংখ্যা কম নয়।
স্থানীয়রা জানান, দুর্গম এলাকায় যারা বাড়িতে অবস্থান করছেন, তাদের অনেকের কাছেই ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাচ্ছে না। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিদিন হাজার হাজার প্যাকেট খাদ্য সহায়তা (ত্রাণ) বিতরণ করা হলেও যাতায়াতের দুর্ভোগসহ সমন্বয়হীনতার কারণে ওই সব এলাকায় অবস্থানকারীরা এর সুফল পাচ্ছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিঘলী, চরশাহী, বাঙ্গাখাঁ ও মান্দারী ইউনিয়নের দুর্গম এলাকায় পানিবন্দি হয়ে যাতায়াত করা যাচ্ছে না। অতিরিক্ত পানির কারণে গ্রামীণ অভ্যন্তরীণ পাকা রাস্তাগুলোতেও চলাচল করা যাচ্ছে না। এতে সেখানকার পানিবন্দি মানুষগুলোর মাঝে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। এসব এলাকায় ত্রাণ বিতরণে নৌকার কোনো বিকল্প নেই। মান্দারী-দিঘলী সড়ক পানিতে ডুবে থাকায় যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে আছে।
ত্রাণ বিতরণকারী স্বেচ্ছাসেবক মাহমুদুল হাসান বলেন, বুক পানি পার হয়ে দিঘলী ইউনিয়নে একটি দুর্গম এলাকায় ত্রাণ নিয়ে গিয়েছি। এত পানির পরও ওই এলাকার অনেকেই আশ্রয়ণ কেন্দ্রে যায়নি।
এদিকে বন্যার পানি বেড়েই চলছে লক্ষ্মীপুরে। উজান থেকে ধেয়ে আসা পানির সঙ্গে যোগ হচ্ছে বৃষ্টির পানি। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাত থেকে বুধবার (২৮ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে জেলাজুড়ে। এতে জেলার সর্বত্রই পানির পরিমাণ অন্তত আরও আধাফুট বেড়ে গেছে। ফলে নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই। দুর্ভোগও বেড়ে গেছে বহুগুণ।
এদিকে সরকারিভাবে যে পরিমাণ চাল ও অর্থ বরাদ্দ রয়েছে তাও অপ্রতুল বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুরাইয়া জাহান। মঙ্গলবার সকালে নিজ কার্যালয়ে এক বিশেষ সভায় তিনি বলেন, জেলায় ৭ লাখ ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এ পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। বন্যাদুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের জন্য ৭০০ টন চাল এবং নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শিশু খাদ্যের জন্য ৫ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫০৯ টন চাল ও ১৬ লাখ টাকা ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় এ বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আরও ৩০ লাখ টাকার চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, নোয়াখালীর পানি লক্ষ্মীপুরে অনবরত ঢুকছে। তবে রহমতখালী ও ওয়াপদা খাল হয়ে মেঘনা নদীতে প্রচুর পানি নেমেছে। এ ছাড়া রায়পুর ও রামগঞ্জেও পানি কমছে। রামগতি ও কমলনগরে বেড়িবাঁধের বাইরে ভুলুয়া নদী এলাকায় মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। সেখানে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে নোয়াখালীর পানি এসে ভুলুয়ার নদীতে যুক্ত হচ্ছে।
মন্তব্য করুন