উজানের ঢলে গোমতী, ঘুঙুর ও সালদা নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি তীব্র বেগে প্রবেশ করায় কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, ভয়াবহ বন্যায় এ উপজেলার ৯৫ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছেন ৭০ হাজার পরিবার। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৮টি ইউনিয়নের বানভাসী মানুষদের জন্য ২৯টি প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকসহ কলেজগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
গত সোম ও মঙ্গলবার উপজেলার কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, মোট ২৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে সাধারণভাবে ৬ হাজার ৫৬৫ জনের ধারণক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) পর্যন্ত ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি বানভাসী মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে। ফলে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বানভাসী মানুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে।
এ সময় দেখা গেছে, চান্দলা করিম বক্স হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজে ধারণক্ষমতা ৩০০, কিন্তু হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দুপুরের পর থেকে দেড় শতাধিক বানভাসী মানুষ ওই আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। যত সময় যাচ্ছে ততই এ সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। উপজেলা সদরের সরকারি ভগবান উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩০০ জনের স্থানে গতকাল পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে৷ এ ক্ষেত্রে বানভাসী মানুষদের আশ্রয় দিতে নতুন বহুতল ভবন খুলে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলার সদর এলাকার দীর্ঘভূমি বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া সাহেবাবাদ ইউনিয়নের ছাতিয়ানী এলাকার বানভাসী মো. মিজানুর রহমান বলেন, বন্যার পানি ঘরের মেঝেতে একফুট পর্যন্ত উঠে এসেছে। ঘরে থাকার মতো কোনো পরিবেশ নেই, তাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছি। আমাদের এলাকার অধিকাংশ মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।
উপজেলার চান্দলা ইউনিয়নের চান্দলা করিম বক্স হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া যদু মিয়া বলেন, বানের জলে আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। উঠানে পানি আসার পরও আশ্রয়কেন্দ্রে আসিনি। তবে ঘরে পানি উঠে যাওয়ায় ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনি নিয়ে এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স ম আজহারুল ইসলাম বলেন, বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। বর্তমানে পুরো উপজেলায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। স্কুল-কলেজে সর্বোচ্চ সংখ্যক বানভাসী মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। সবাইকে সম্মিলিতভাবে এই দুর্যোগ মোকাবিলার আহ্বান জানাচ্ছি।
মন্তব্য করুন