নোয়াখালীর মুসাপুর রেগুলেটর ভেঙে তলিয়ে যাওয়ার পর মেঘনার জোয়ারে প্লাবিত হয়ে আশপাশে ভাঙতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভবন, আশপাশের সড়ক, ফরেস্ট, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা মেঘনা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
এতে করে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষজন বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে। অনেক স্থানীয় বাসিন্দাকে দেখা গেছে জরুরি আসবাবপত্র, জিনিসপত্র এবং কেউ কেউ ঘরের চাল, বেড়া খুলে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন। মুসাপুর রেগুলেটর সংলগ্ন আর্মি ক্যাম্পও যে কোনো সময় মেঘনায় বিলীন হয়ে যেতে পারে।
স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন নদী উত্তাল হয়ে পড়লে জোয়ারের পানিতে মুসাপুরের আশপাশসহ পুরো কোম্পানিগঞ্জ ও নোয়াখালী প্লাবিত হয়ে যেতে পারে।
কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার হোসাইন পাটোয়ারী বলেন, অতিরিক্ত পানির চাপে মুসাপুর রেগুলেটর ভেঙে গেছে। আজকে জোয়ারের তোড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটা বিল্ডিং ভেঙে গেছে। আশপাশে প্লাবিত হয়ে আরও নতুন এলাকা প্লাবিত হতে পারে এবং ভাঙন ধরতে পারে। স্থানীয়দের নিরাপদ আশ্রয় নেওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।
এর আগে সোমবার (২৬ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে এ ভাঙনের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, ২০০৪ সালে ডাকাতিয়া নদীর মুখে প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে মুছাপুর রেগুলেটরের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। এর কাজ শেষ হয় ২০০৯ সালের দিকে। এতে কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর, চরপার্বতী, চরহাজারী ইউনিয়ন নদীভাঙন এবং অতিরিক্ত জোয়ারের পানি থেকে রক্ষা পায়। সোমবার সকালের দিকে প্রথমে রেগুলেটরে একটু ফাটল দেখা দেয়। এরপর সকাল ১০টার দিকে রেগুলেটরের মাঝের অংশ ভেঙে যায়। একপর্যায়ে পুরো রেগুলেটর ভেঙে ডাকাতিয়া নদীতে তলিয়ে যায়।
এর আগে, গত ২৪ আগস্ট নোয়াখালীর বন্যার পানি নামাতে কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর রেগুলেটরের তিন মিটার বাই তিন মিটার আয়তনের ২৩টি গেটের সব গেট খুলে দেওয়া হয়। ফলে ওই সময়ের কোম্পানীগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়। কিন্তু মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে যাওয়ায় বন্য পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করেছে। ফলে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই ও বসুরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র মির্জা কাদেরের নেতৃত্বে তার পরিবার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও ভূমিদস্যুরা মিলে মুসাপুর রেগুলেটরের আশপাশ থেকে অবৈধভাবে অন্তত ৫০ কোটি টাকার বালু উত্তোলন করেছে, যার কারণে এ রেগুলেটরটি ভেঙে গেছে। তারা আরও বলেন, এতে স্থানীয় প্রশাসনেরও যোগসাজশ থাকতে পারে। সেটাও খতিয়ে দেখা হোক। কারণ প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।