শরীয়তপুরে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। টানা বৃষ্টির প্রভাবে বেশিরভাগ মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হচ্ছে। জীবিকার তাগিদে নিম্ন আয়ের অনেকেই বৃষ্টি মাথায় করেই বের হচ্ছেন কাজের সন্ধানে। কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে অনেকেরই কাজ মিলছে না। ফলে দুর্ভোগে পড়ছেন তারা।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা যায়, শরীয়তপুরে বৈরী আবহাওয়ার প্রভাব রয়েছে। একটু বিরতি দিলেও সকাল ৬টা থেকে আবারও অঝোর ধারায় বৃষ্টি শুরু হয়। এ বৃষ্টি উপেক্ষা করে নিম্ন আয়ের মানুষ জীবিকার তাগিদে কাজে বের হন। বাজারের কিছু দোকান খোলা থাকলেও ক্রেতার দেখা মেলেনি। হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোয় মানুষের আনাগোনা নেই। ফলে অলস সময় পার করছেন দোকানিরা।
টানা বৃষ্টিতে পর্দা টেনে যাত্রীর আশায় বসে থাকা অটোরিকশাচালক নূর মোহাম্মদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। কাছে যেতেই যাত্রী ভেবে বলে ওঠেন, যাবেন স্যার, অটোতে ওঠেন। না বলায় চেহারা মলিন হয়ে যায় তার। নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘আজ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিদিন বৃষ্টি মাথায় করে দুডো টাহার জন্য অটো নিয়ে রাস্তায় আহি কিন্তু তেমন কোনো যাত্রী পাই না।
ঘরে চাউল, ডাইল কিছুই নাই। গত কদিন এক দোকানতন বাকি নিছি, হেই টাহাও দিতে পারি নাই, আজ আবার কেমনে বাকি চামু। আমাগো মতো গরিবের যত মরণ।’
বটতলা মোড়ে জুতা সেলাই করে সংসার চলে কালীপদ মণ্ডলের। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘দোকান মালিক দয়া করে তার দোকানের সামনে বসতে দিছে। কিন্তু উপরে কোনো চাল নাই, বৃষ্টি হলে আর এখানে বসে কাজ করতে পারি না। বৃষ্টির জন্য মানুষও আসে না। তাই কয়ডা দিন ধরে মাছ-তরকারি ছাড়াই সাদা নাশতা খাই।’
মো. কালু ফকির শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় ঘুরে ঘুরে চা-সিগারেট বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে মানুষজন কম বের হয়। তাই বেচাবিক্রি নাই বললেই চলে। এখন যা বিক্রি করি তা দিয়ে আমার নিজের খরচ উঠে না, সংসার চালাব কীভাবে।’
প্রেমতলা মোড়ে চা-সিগারেট বিক্রেতা হাবিব ঢালী বলেন, কখনো টানা বৃষ্টি, আবার কখনো গুঁড়ি বৃষ্টি। সকাল থেকে দোকান খুলে বসে আছি। বৃষ্টির কারণে মানুষ বাইরে বের হয় না। বেচাবিক্রি নাই। পালং বাজারে কুলির কাজ করে সংসার চালান কালু মিয়া। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি থাকায়, মানুষ বাজারঘাটে আসে না। মানুষ না এলে আমাদের কাজও বন্ধ হয়ে যায়। ধনীরা বাড়িতে বসে থাকলেও খেতে পারে। কিন্তু আমাদের কামাই না হলে খাওয়ার কোনো উপায় নাই। আরও কদিন এমন বৃষ্টি হলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।’
মন্তব্য করুন