বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রসমাজের ডাকে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন ময়মনসিংহের ত্রিশালের ইনতিশার। আন্দোলনের শুরু থেকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি।
৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ অংশগ্রহণের জন্য মা-বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যান ইনতিশার। পথে মাওনা পৌঁছালে তাদের বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঢাকায় যাওয়ার পথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান ইনতিশার।
এদিকে ছাত্র আন্দোলনের বিজয়বার্তায় যখন সারা দেশ আনন্দে উদ্বেলিত ঠিক সেই সময় ইনতিশারের বাড়িতে খবর আসে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন তিনি। এ খবরে তার মা-বাবা পাগলপ্রায়। ছেলের কথা মনে হলেই বার বার মূর্ছা যান মা।
মা নাজমুন্নাহার বলেন, আমার ছেলে বলে গেল মা ‘দেশ স্বাধীন’ করে আসছি। কিন্ত, আর ফিরল না। আমি এখন কাকে আদর করে বাবা বলে ডাকব।
ইনতিশারের বাড়ি ত্রিশাল উপজেলার বইলর ইউনিয়নের উজান বইলর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আ হ ম এনামুল হক লিটনের বড় ছেলে। এইচএসসি পাস ইনতিশারুল হক ইনতিশার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
এদিকে ৭ জুন কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আবু সাঈদের মৃত্যুর পর আন্দোলনকারীরা জীবন মৃত্যুবাজি রেখে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন।
আমাদের আদরের সন্তান চিরদিনের জন্য সব মায়া-মমতা ফেলে দেশের জন্য যুদ্ধ করে না ফেরার দেশে চলে গেছে, তাকে যেন জাতীয় বীরের মর্যাদা দেওয়া হয়, এমন দাবি বর্তমান সরকারের কাছে করেছেন ইনতিশারের মা-বাবা।
ইনতিশারের ছোট ভাই বাশিরুল হক মাহির বলেন, আমার ভাই আমার বন্ধু ছিল, কোটা সংস্কার আন্দোলনে আমার ভাই নিহত হয়েছেন। আমার ভাই যেন আবু সাঈদের মতো জাতীয় বীরের মর্যাদা পান।
চাচা অধ্যক্ষ মাওলানা নাজমুল হক বলেন, আমাদের পরিবারের সবার বড় ইনতিশার কোটা আন্দোলনে লং মার্চ টু ঢাকায় যাওয়ার পথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়। বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের পরিবারের আবেদন তাকে যেন জাতীয় বীরের মর্যাদা দেওয়া হয়। বইলর ধানীখোলা সড়কক ইনতিশারের নামে নামকরণ করার দাবি জানান তিনি।
বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কারের দাবিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে শহিদ ইনতিশারের মা-বাবাকে সান্ত্বনা ও তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় কবর জিয়ারত করতে ছুটে যান ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা জুয়েল আহমেদ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্ররা ইনতিশারকে জাতীয় বীরের মর্যাদা দেওয়ার জন্য বর্তমান সরকারেরকাছে জোর দাবি জানান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রবিউস সানি কালবেলাকে বলেন, ইনতিশার আন্দোলনের প্রথম থেকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। মার্চ টু ঢাকায় যাওয়ার পথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত হন তিনি। আমরা এ হত্যার বিচার চাই। জাতীয় বীরের নামের তালিকায় ইনতিশার যেন স্বর্ণ অক্ষরে লেখা থাকে এ দাবি জানাই।
মন্তব্য করুন