স্মরণকালের ভয়াবহ আকস্মিক বন্যায় ডুবেছে কুমিল্লার অধিকাংশ এলাকা। বেশ কয়েক দিনের টানা ভারি বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ভয়াবহ এই বন্যার কবলে পড়েছে কুমিল্লাবাসী।
সোমবার (২৬ আগস্ট) দুপুর ২টা পর্যন্ত থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে জেলার প্রায় অধিকাংশ উপজেলাগুলোতে। এর আগে গতকাল রোববার রাত থেকে এ বৃষ্টি শুরু হয়।
এদিকে আবহাওয়া অফিস সূত্র থেকে জানা গেছে, মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা ও আকাশে মেঘের কারণে এই বৃষ্টি। তবে যে পরিমাণ বৃষ্টি পড়ছে সেটি মিটার স্কেলের হিসেবে যোগ্য নয়। এ বৃষ্টির সঙ্গে মাঝারি আকারের ঠান্ডা বাতাসও প্রবাহিত হচ্ছে।
কুমিল্লা আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আরিফুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে বলেও তিনি জানান।
অপরদিকে, জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টির অধিকাংশ এলাকা বন্যার পানিতে আবদ্ধ। উজানের পানি আসা বন্ধ না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বসতভিটা থাকার অযোগ্য হয়ে পড়ছে অধিকাংশদের। আবার অনেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠছেন।
জেলার বন্যাকবলিত বেশ কয়েকটি উপজেলার খবর নিয়ে দেখা গেছে, বেশিরভাগ এলাকায় রাস্তাঘাট চেনার কোনো উপায় নেই। কোনো কোনো সড়কে কোমর সমান পানি, আবার কোনোটিতে হাঁটুসমান। ঘরবাড়ির অর্ধেক পর্যন্ত ডুবেছে কিছু কিছু এলাকায়।
বানের পানিতে বাস্তুহারা হয়ে অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে উঠলেও বেশকিছু মানুষকে উঁচুস্থানে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। হালকা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ফলে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
বৃষ্টির এ ধারা অব্যাহত থাকলে বন্যার পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে, এই শঙ্কায় জেলার লাখ লাখ মানুষ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
এ পর্যন্ত কুমিল্লা জেলায় বন্যার পানিতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। বুড়িচং উপজেলায় মসজিদ এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ের কিছু বহুতল ভবন ছাড়া সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত মোট ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩০ হাজারের অধিক মানুষ রয়েছে। এ ছাড়া নিজ বাড়ির বসতভিটায় পানিবন্দি অবস্থায় আছে ২ লাখের অধিক মানুষ। এ উপজেলার অধিকাংশ এলাকাতে বন্যায় পানি আটকে আছে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে গোমতীর উলটো পাড়ের ৩টি ইউনিয়ন ছাড়া বাকি ৬টিতে মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। তবে পর্যাপ্ত নৌকার অভাবে এসব ইউনিয়নের দুর্গম এলাকা পানিবন্দি মানুষের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন থানা ওসি মো. আবুল হাসানাত খন্দকার। তবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও জানান, উপজেলার আক্রান্ত এলাকায় পানির উচ্চতা এখনও ৬-৮ ফুট রয়েছে এবং কোনো কোনো দুর্গম এলাকায় সেটি ১০ ফুটও আছে। কোনো কোনো এলাকায় পানি কমছে তবে খুবই ধীর গতিতে।
বুড়িচংয়ের ষোলোনল এলাকার মো. সুমন মিয়া বলেন, আমরা যারা নিম্ন আয়ের মানুষ আমাদের দুর্গতির শেষ নেই। পরিবার নিয়ে একটা আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছিলাম। এখন বাড়িটি দেখতে যাচ্ছি। কোনো রকমে বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঠেস দিয়ে বসতঘরটি আটকে রেখেছিলাম। পানি যেভাবে বাড়ছে তাতে কখন ঘরটা ভেসে যায়, সেই দুশ্চিন্তায় আছি। তারপর বৃষ্টিও পড়ছে। সহজে পানি কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।