নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৪, ১০:৪৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

রক্ত কেনাবেচার সংবাদ সংগ্রহ : হামলার শিকার দুই সাংবাদিক

আরমান হোসেন রুমন এবং মনিরুল ইসলাম শামীম। ছবি : সংগৃহীত
আরমান হোসেন রুমন এবং মনিরুল ইসলাম শামীম। ছবি : সংগৃহীত

নওগাঁ শহরের বলাকা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রক্ত কেনাবেচা অভিযোগের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দুই সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছেন। শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে শহরের স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় ওই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক এনামুল হকের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয় বলে ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের অভিযোগ।

আহতরা হলেন- বণিক বার্তা ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টের জেলা প্রতিনিধি আরমান হোসেন রুমন এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ ২৪ ডটকমের জেলা প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম শামীম।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত ২১ আগস্ট পায়ে ইনফেকশনজনিত সমস্যায় বলাকা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হয়েছিলেন জেলার পত্নীতলা উপজেলার আমাইড় ইউনিয়নের কান্তাকিসমত গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী সুষমা মন্ডল। এরপর সেখানে অপারেশন করানোর নামে রোগীর স্বজনদের তড়িঘড়ি করে দুই ব্যাগ এবি নেগেটিভ রক্ত ব্যবস্থা করতে বলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। একপর্যায়ে রোগীর স্বজনদের মানসিক চাপে ফেলে রক্ত সংগ্রহের নামে ৬ হাজার টাকা আদায় করা হয়। এই পুরো প্রক্রিয়ায় প্রকাশ্যে জড়িত ছিলেন ক্লিনিকের পরিচালক এনামুল হক ও তার ফার্মেসি বিভাগের ইনচার্জ অরূপ কুমার। সম্প্রতি ওই ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে রোগীদের ফাঁদে ফেলে এভাবে রক্ত কেনাবেচার বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য-প্রমাণ গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে উপস্থাপন করেন ভুক্তভোগী সুষমা মণ্ডলের নাতি অপূর্ব কুমার।

শনিবার দুপুর ১টার দিকে শহরের বলাকা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনার সংবাদ সংগ্রহে গেলে সাংবাদিক আরমান হোসেন রুমন ও মনিরুল ইসলাম শামীমের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বলাকা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক এনামুল হক। এক পর্যায়ে পেটুয়া বাহিনীকে সাথে নিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা চালান তিনি। এরপর আধাঘণ্টা একটি কক্ষে তাদের দুজনকে অবরুদ্ধ করে রাখেন এনামুল হক। পরে সংবাদ প্রকাশ করা হলে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে সেখান থেকে বের করে দেন তিনি।

এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নওগাঁ ব্লাড সার্কেলের উপদেষ্টা সাঈদ জোবায়েদ অনিক জানান, বলাকা ক্লিনিকে ওই দুই সাংবাদিক প্রবেশের পর ফার্মেসি বিভাগের ইনচার্জের কাছে রক্ত কেনাবেচার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পরিচালককে ডেকে নেন। পরিচালক এনামুল হক সেখানে আসা মাত্রই সাংবাদিকদের ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। তার সঙ্গে যোগ দেয় আরও অনেকে। সবাই মিলে দুই সাংবাদিককে টেনে পরিচালকের কক্ষে নিয়ে যায়। ওই কক্ষে দুই সাংবাদিককে আটকে রেখে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলায় জড়ানোসহ মেরে ফেলার হুমকি দেন পরিচালক এনামুল হক।

হামলার শিকার সাংবাদিক আরমান হোসেন রুমন বলেন, বলাকা ক্লিনিকে প্রায়ই ভুল অপারেশন হয়ে থাকে। এতে অনেক সময় রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এসব কারণে বেশ কয়েকবার ক্লিনিকটি বন্ধ করে দিয়েছিলো স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে ক্ষমতাবলে এনামুল হক সেটি আবারও চালু করেন। রোগীদের জিম্মি করে রক্ত কেনাবেচায় নওগাঁ শহরে একটি চক্র কাজ করে। এ চক্রের সন্ধানে বেরোলে চাঞ্চল্যকর তথ্য আসে এনামুল হক এর বিরুদ্ধে। সেই বিষয়ে কথা বলতে গেলে আমাদের মোবাইল ফোন, ক্যামেরা, মাইক্রোফোনসহ যাবতীয় ইকুইপমেন্ট কেড়ে নিয়ে হামলা চালায় এনামুল। পরে সেখানকার একটি কক্ষে অবরুদ্ধ থাকার পর কৌশলে দুজন মুক্ত হতে পেরেছি।

আরেক ভুক্তভোগী সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম শামীম বলেন, অবরুদ্ধ অবস্থায় এনামুল ও তার পেটুয়া বাহিনী মোবাইল দিয়ে আমাদের ভিডিও ধারণ করেছে। এই সংবাদ প্রকাশ করলে আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়েছে। বর্তমানে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। বিষয়টি সেনাবাহিনীসহ থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে।

গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার ও রক্ত কেনা বেচার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বলাকা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক এনামুল হক কালবেলাকে বলেন, এই বিষয়টা অরূপ কুমার নামের এক ফার্মেসির সঙ্গে হয়েছিল। বিষয়টির সমাধানও হয়েছিল। কিন্তু হিন্দু ছেলে হওয়ায় দুজন এসে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ভিডিও করতে লাগে এবং হুমকি দিতে লাগে এবং ক্লিনিকে নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে রক্ত কেনাবেচার বিষয়ে নানান প্রশ্ন করছিল। একজনের বয়স কম হওয়ায় সন্দেহ মনে হচ্ছিল এবং আর একজন আমার পরিচিত সাংবাদিক ছিল। আমি তাদেরকে ভিডিও করতে নিষেধ করে অফিসে বসতে বলি এবং অফিস কক্ষে বসিয়েছিলাম। তাদের আচার আচরণ ছিল টাকা দাবি, এমনকি হিন্দু ছেলে অরূপের কাছে আকার ইঙ্গিতে টাকা চেয়েছে। এরপর দুজনকে বুঝিয়ে ফেরত পাঠিয়েছি। হামলা বা অবরুদ্ধ রাখার অভিযোগটি সঠিক নয়। এমনকি আমার সন্দেহ হওয়ায় সেনাবাহিনীকে পর্যন্ত কল দিয়েছিলাম। আমার এখানে সকল কিছু সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড করা আছে। তারা যদি অন্যায় কিছু বলে তাহলে আমিও এগুলো ছেড়ে দেব।

নওগাঁ সদর থানা পুলিশের ওসি জাহিদুল হক জানান, বলাকা ক্লিনিকে হামলার শিকার দুই সাংবাদিকের সঙ্গে ইতোমধ্যেই কথা হয়েছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অস্ত্র হাতে সেই লিটন গ্রেপ্তার

কমলার সঙ্গে আর বিতর্কে যাবেন না ট্রাম্প

চিরকুট ও কাফনের কাপড় রেখে প্রাণনাশের হুমকি

অসুস্থ ফুটবলারের চিকিৎসায় পাশে দাঁড়ালেন তারেক রহমান

ভারতে পাচারকালে কুমিল্লা সীমান্তে ফের ইলিশের চালান জব্দ

সুনামগঞ্জ সীমান্তে সাড়ে ১৯ লাখ রুপিসহ যুবক আটক

দাবানলে পাল্টে যাচ্ছে আবহাওয়া, স্যাটেলাইটে ভয়ংকর দৃশ্য

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডিতে নতুন মুখ

শেখ হাসিনার নতুন ফোনালাপ, নিজেকে প্রধানমন্ত্রী দাবি

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে ৩ জনের মৃত্যু

১০

৫০ হাজার কর্মীর পরিবার করুণ অবস্থায় আছে : আওয়ামী লীগ

১১

সাতক্ষীরায় ১১টি সোনার বারসহ চোরাকারবারি আটক

১২

আসছেন ডোনাল্ড লু / ঢাকাকে বিরক্ত না করতে দিল্লিকে দেবেন বার্তা

১৩

গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক লোডশেডিং, বেকায়দায় শিক্ষার্থীরা

১৪

এখনো স্বৈরাচারী কায়দায় চলছে গণপরিবহন: যাত্রী অধিকার আন্দোলন

১৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হাসপাতালে জরুরি বিভাগে দুপক্ষের সংঘর্ষ

১৬

মধ্যপ্রাচ্য থেকে পিছু হটছে মার্কিন রণতরী

১৭

আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর সঙ্গে জড়িত সেই আরাফাত গ্রেপ্তার

১৮

ভারতে পাচারের সময় সুপারি, রসুন ও শিং মাছ জব্দ

১৯

হবিগঞ্জে বিএনপি নেতা বহিষ্কার

২০
X