কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে লক্ষ্মীপুরে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি থামলেও নামছে না পানি। উল্টো জেলা শহরসহ ৫টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাড়তে শুরু করেছে উজানের পানির চাপ। খাল-বিলগুলো দিয়ে ঢুকছে পানি।
শনিবার (২৪ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ, কুশাখালী, কমলনগর উপজেলা, রামগতি ও রামগঞ্জ উপজেলায় ১৮৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া এসব এলাকার বেশিরভাগ সরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলো বন্যার্তদের আশ্রয়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, সর্বত্রই এখন জলাবদ্ধতা। খাল বিল দিয়ে ভারত থেকে নির্গত পানি জেলায় ঢুকতে শুরু করেছে। গত ২১-২২ দিন টানা বৃষ্টিপাতে ঘরবাড়ি হাটু সমান পানিতে ডুবেছে। শুক্রবার থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত তেমন কোনো বৃষ্টি হয়নি। কিন্তু উল্টো পানি বেড়ে কোমরসমান ডুবে গেছে।
সদর উপজেলার চাঁদখালি গ্রামের ষাটোর্ধ্ব মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ৯৮ এর বন্যা দেখেছি, কিন্তু এমনতো দেখিনি। সকালে যেখানে হাটু পানি ছিল, সেখানে দুপুরে কোমর সমান পানি।
একই এলাকার দোকানদার রাশেদ বলেন, সকালে দোকান ঝাড়ু দিয়ে মুছে গিয়েছি। দুই ঘণ্টা পর এসে দেখি দোকানের ভেতরে দুই ফুট পানি। পেছনের বাড়িঘর সব পানিতে ডুবে গেছে।
উত্তর চাঁদখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইসমাইল হোসেন সিরাজী বলেন, ভারত থেকে নেমে আসা বন্যার পানি ফেনী-কুমিল্লাহ ও নোয়াখালী হয়ে এখন লক্ষ্মীপুরে ঢুকতে শুরু করেছে। এ জন্য বৃষ্টি থামার পারও পানি না নেমে বাড়ছে। এতে আমাদের স্কুলে পানি ঢুকে আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কবে নাগাদ পানি নামে তার কোনো ঠিক নেই।
এদিকে চাঁদখালি এ রব বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ২২টি পরিবার সেখানে আশ্রয় নিয়েছে।
লাহারকান্দি ইউনিয়ের ইউপি সদস্য আবদুল্লাহ আল মুকিম বলেন, এ ইউনিয়নের ১, ৫,৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সবগুলো এলাকায় সকালে ৬-৮ ইঞ্চি পানি বেড়েছে। ডুবে গেছে অধিকাংশ বাড়িঘর। আজ রাতে এভাবে থাকলে ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে। প্রশাসনসহ বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে কমলনগরের চরপাগলা ইউনিয়ন, চর কাদিরা, চর লরেন্স ও রামগতি উপজেলার পূর্বাঞ্চলের ইউনিয়নগুলো গত ২২ দিন ধরে পানিবন্দি। একইভাবে নোয়াখালী থেকে নেমে আসা পানিতে তাদের বাড়িঘর পানির পরিমাণ ২ ফুট বেড়েছে। তাদের অনেকে যাচ্ছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান বলেন, এ উপজেলায় প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে জীবনযাপন করছে। আমরা ইতোমধ্যে আমরা পানিবন্দি ৬০০ পরিবারকে সাইক্লোন সেন্টারে পৌঁছানো সক্ষম হলাম। তাদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। যেখানেই আমরা পানিবন্দি মানুষের সন্ধান পাব, সেখানেই আমরা ছুটে যায়।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বন্যার্তদের সহায়তায় ৫৭৬ টন চাল ও নগদ ১০ লাখ ৭৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান জানান, যেসব এলাকায় মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। ওইসব এলাকায় আমাদের নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) কাজ করছে। আমরা পানিবন্দি মানুষগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র নেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। নতুন করে যেসব এলাকায় মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে আমরা তাদেরও খোঁজখবর নিচ্ছি।