ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নই বন্যার কবলে পড়েছে। এমতাবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেলঘর উত্তর, বেলঘর দক্ষিণ ও ভূলইন উত্তর ইউনিয়ন। হাঁটু সমান পানিতে ডুবে গেছে গৈয়ারভাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়, বাগমারা উচ্চ বিদ্যালয়, ছোট শরীফপুর উচ্চ বিদ্যালয়, ফয়েজগঞ্জ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা, পালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বন্যার পানিতে মিশে গেছে লাখ লাখ টাকার মাছ। কোমর সমান পানিতে ডুবেছে বাড়িঘর-রাস্তাঘাট। এমন পরিস্থিতিতে দুই দিন ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে উপজেলার অনেক গ্রাম। সংকট দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির।
ফরহাদ হোসেন আনাস নামে শিকারপুর গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, বৃহস্পতিবার সকালেই বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে তার একমাত্র বসতঘর। আপাতত পরিবার নিয়ে ভাইয়ের বাসায় থাকছেন তিনি। সেটাও যে কোনো সময় তলিয়ে যেতে পারে। তাই দুশ্চিন্তা আর উৎকণ্ঠায় সময় যাচ্ছে তার। গ্রামের অনেকে জাল ছিটিয়ে মাছ ধরলেও ফরহাদের সে আনন্দ আর তাগাদা নেই। কারণ, তার সারাজীবনের অর্জন পানিতে ভাসছে।
বেলঘর এলাকার বাসিন্দা এসএম কামাল জানান, গত এক যুগেও বন্যার এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখেনি এ অঞ্চলের মানুষ। যেটি ১৯৮৮ এবং ১৯৯৮ সালের বন্যার ভয়াবহতাকেও ছাড়িয়ে গেছে। সর্বনাশা এই বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের মানুষ। এখানকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রিত মানুষের অভাব নেই। আল্লাহ যেন সবাইকে হেফাজত করেন।
নিখাদ মজুমদার নামে এক মৎস্যচাষি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ১৫ একর জমিতে ১১টি মাছের ফিশারি ছিল। চোখের ফলকে বন্যার পানি ভাসিয়ে নিল সব ফিশারির মাছ। প্রতিটি প্রজেক্টের পাড় থেকে প্রায় ৫-৬ ফিট উপরে উঠে গেছে পানি। তাই শত চেষ্টা করেও মাছ আটকাতে পারিনি। আমার মতো অনেক মাছচাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার প্রায় পাঁচ শতাধিক গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ঘর থেকে বের হতে পারছেন না তারা। উপজেলার প্রায় ২ হাজার নারী, পুরুষ ও শিশু আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। তাদের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে এবং নিয়মিত তাদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
লালমাই ইউএনও মোহাম্মদ হেলাল চৌধুরী জানান, উপজেলার তিনটি স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রসহ পুরো উপজেলায় ৬৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রাখা হয়েছে। আশ্রিতদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের উপজেলা প্রশাসন থেকে ১২ টন চাল দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও যেখানে যা প্রয়োজন হচ্ছে আমরা তা দিচ্ছি এবং নিয়মিত মনিটরিং করছি। সরকারের পাশাপাশি পানিবন্দিদের সহযোগিতায় বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও এগিয়ে এসেছে। তারাও কাজ করছে।
মন্তব্য করুন