রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় অবৈধ ইটভাটার ছড়াছড়ি। পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছ থেকে হাতেগোনা কিছু ইটভাটা ছাড়পত্র নিলেও বেশিরভাগ ইটভাটারই নেই হালনাগাদ। মাঝেমধ্যেই অবৈধ এসব ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে সাময়িকভাবে কিছু জরিমানা করেই চুপচাপ কর্তৃপক্ষ। দিনের পর দিন স্থানীয় প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে অবৈধভাবে ইটভাটার রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
রাজশাহীর পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি সূত্র মতে, রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় মোট ইটভাটা রয়েছে ১ হাজার ১১৯টি। যার মধ্যে ৯৩২টি ইটভাটাই অবৈধ। এর মধ্যে রাজশাহী জেলায় ১০৭ টির মধ্যে ৭৬ টি, চাপাইনবাবগঞ্জে ১০৪টির মধ্যে ৯১টি, নাটোরে ১১১টির মধ্যে ৭২টি, নওগাঁয় ১৯৩টির মধ্যে ১৮৭টি, বগুড়ায় ২৩৫টির মধ্যে ২১৮টি, জয়পুরহাটে ৪৮টির মধ্যে ৩৯টি, পাবনায় ১৮৭টির মধ্যে ১৬১টি এবং সিরাজগঞ্জে ১৩৪টির মধ্যে ৮৮টি ইটভাটা অবৈধ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় ১০৭টি ইটভাটার মধ্যে মাত্র ৩১টির হালনাগাদ তথ্য রয়েছে। বাকি ৭৬টি ইটভাটা প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে চালাচ্ছে। অনাবাদি কিংবা এক ফসলি জমিতে অনুমোদন সাপেক্ষে ইটভাটা নির্মাণের বিধান থাকলেও কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ করে দিনের পরিবেশ বিপর্যয় ঘটানো হচ্ছে। আবার তিন ফসলি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন করে এসব মাটি যাচ্ছে অবৈধ ইটভাটায়। ফলে একদিকে যেমন আইন ভেঙ্গে মাটির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফসল উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটানো হচ্ছে অপরদিকে অবৈধ ইটভাটায় ইট পুড়িয়ে ফসল ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, এক ফসলি বা অনাবাদি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ করা যায়। কিন্তু রাজশাহীর বেশির ভাগ ইটভাটা গড়ে উঠেছে দুই অথবা তিন ফসলি জমিতে। কোনো কোনো সময় ভাটা মালিকরা জমি কিনে নিয়ে কয়েক বছর ধরে অনাবাদি ফেলে রাখেন। পরে অনাবাদি দেখিয়ে ছাড়পত্র নেন। ভাটা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় কৃষি বিভাগেরও কিছুই করার থাকে না। তারা নানাভাবে পার পেয়ে যান।
রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর অধিকাংশ ইটভাটার মালিক ছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। ফলে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকটা জিম্মি করেই তারা অবৈধভাবে ইটভাটা নির্মাণ করে তাজা কাঠ পুড়িয়ে ইট বানাতো। মাঝেমধ্যে নামেমাত্র ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে দুই-চারজনকে জরিমানা করেই দায় শেষ করতো কর্তৃপক্ষ। চলতি বছর অবৈধ এসব ইটভাটা বন্ধে তেমন কোন উদ্যোগ চোখে না পড়লেও গত বছর ৪টি অভিযানে মাত্র ১৩টি ইটভাটাকে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তরের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসময় ৮টি ইটভাটা ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক নীল রতন সরকার বলেন, ‘পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি আমাদের কাছে কোন চিঠি আসেনি। তবে আমরা ইতোমধ্যেই অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শুরু করেছি। আমরা খুব শিগগিরই অবৈধ যত ইটভাটা রয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবো। অবৈধভাবে ইটভাটা চালানোর আর কোন সুযোগ নেই।’
মন্তব্য করুন