ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টিতে মৌলভীবাজারের মনু নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে রাজনগর উপজেলার নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েকটি ইউনিয়নে নতুন করে বন্যা দেখা দিয়েছে।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুপ্রভাত চাকমা বলেন, আমরা নিজেরা পানিবন্দি হয়ে পড়েছি। যে এলাকাগুলোতে কোনোদিন পানি আসেনি সেই এলাকাগুলো প্লাবিত হয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) ভোররাতে মনু নদীর রাজনগর উপজেলার কদমহাটা এলাকায় বাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
বন্যার ঝুঁকিতে থাকা পৌর শহরে মাইকিং করে সতর্ক করেছে জেলা প্রশাসন। যেকোনো সময় ভাঙতে পারে শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ। তাই শহরের দোকানগুলোর পণ্যসামগ্রী নিরাপদ স্থানে নিতে বলা হচ্ছে। এরই সঙ্গে যারা বাসাবাড়িতে নিচতলায় অবস্থান করছেন শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে নিরাপদ আশ্রয় ওঠার জন্য বলা হচ্ছে।
পানিতে প্লাবিত হয়ে মৌলভীবাজার-কুলাউড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করছে বন্যা। এরই মধ্যে পানিবন্দি হয়ে আছে কয়েক লাখ মানুষ। এদিকে জেলার কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, জুড়ী ও সদর উপজেলায়ও টানা বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী নদীবেষ্টিত মৌলভীবাজার জেলার পাঁচটি নদ-নদীতে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদী, মনু, ধলাই ও জুড়ী নদীর পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এতে নদ-নদী ভাঙনে প্লাবিত হয়েছে শতাধিক গ্রাম।
জেলা সদর, রাজনগর, কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানি বাড়তে থাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বৃহস্পতিবার নিয়মিত বুলেটিনে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার জানায়, সকাল ৯টায় জুড়ী নদে বিপৎসীমার প্রায় ১৯০ সেন্টিমিটার ওপর, ধলাই নদে ৩২ সেমি ও মনু নদীর চাঁদনীঘাটে ১১৫ সেমি ও রেলওয়ে ব্রিজে ১০৫ সেমি ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়াও মৌলভীবাজার শেরপুর পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে চার দিনের দিনের টানা ভারি বৃষ্টিতে হাওর ও নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাড়িঘর প্লাবিত হচ্ছে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, ভয়ানকভাবে পানি বাড়ছে। নদ-নদীর বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। আমরা জিও ব্যাগ ফেলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। কুলাউড়া উপজেলা টিলাগাঁও এলাকায় মনু নদে ভাঙন দেখা দিয়েছে। রাজনগর এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, নদ-নদীর বাঁধ উপচে পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে কতটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে তা নির্ধারণ করা যাচ্ছে না।
মন্তব্য করুন