অব্যাহত বৃষ্টি ও ভারত থেকে ধেয়ে আসা পানিতে ক্রমেই ফুঁসে উঠেছে কুমিল্লার গোমতী নদী। ইতোমধ্যে প্রায় চার হাজার হেক্টর এলাকার ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি ও ঢলের পানি ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। দ্রুতই দুকূল ছাপিয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়বে বলে আশঙ্কা স্থানীয় বাসিন্দাদের।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকাল ৭টা পর্যন্ত পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, পানি আরও বাড়তে পারে। বাঁধ রক্ষায় সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন, পাউবো, উপজেলা প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠন, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা কাজ করছেন।
প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, বাঁধের বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ অংশ দিয়ে লোকালয়ে কিছু পানি ঢুকছে। যেখানেই আমরা খবর পাচ্ছি স্থানীয় জনগণের সহায়তায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।
এদিকে, ‘বাঁধ ভেঙে গিয়েছে’ ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাতভর গুজব ছড়ানোর কারণে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে গোমতীর উভয় তীরের বাসিন্দারা।
মালাপাড়া এলাকার বাসিন্দা স্বপন মিয়া জানান, তিনি পরিবার নিয়ে চরের ভেতর বসবাস করেন। গত ১০ বছর তিনি গোমতী নদীতে এত পানি দেখেননি। তার বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, সন্তান আর দুটি গাভি নিয়ে গোমতীর বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে নিজের ১২০ শতক জমির মূলা পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বুড়িচং উপজেলার ভান্তি এলাকার আবুল কালাম।
ফসল তলিয়েছে কামারখাড়া এলাকার নোয়াব মিয়ারও। তিনি জানান, শিম ও চালকুমড়ার চাষ করেছিলেন। শিমগাছ ছোট ছিল। মাচায় ঝুলছিল কচি চালকুমড়া। সব এখন পানির নিচে।
জালুয়াপাড়া এলাকার কৃষক রহিম মিয়া জানান, এক লাখ টাকা পুঁজি ব্যয় করে ঝিঙে, চিচিঙ্গা, করলা ও চালকুমড়ার চারা রোপণ করেছেন। লতাগুলো মাচায় উঠবে। এই সময়ে গোমতীর পানিতে তার চারাগুলো ডুবে গেছে।
টিক্কারচর এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধে শতাধিক পরিবারকে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। চরের ভেতর কিছু কিছু জায়গায় পানি গলা সমান হয়ে গেছে। সেখানকার বাসিন্দারা বলেন, হুট করে পানি বাড়ায় ঘর থেকে প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই বের করতে পারেননি।
চাঁনপুর এলাকার আজাদ মিয়া বলেন, সন্তানদের বইখাতা, নিজের গায়ের জামাকাপড় নিয়ে গতকাল রাতে বের হয়েছেন। আজ বৃষ্টিতে ভিজে ঘর থেকে খাট ও আলমারি বের করছেন।
এদিকে,টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে ডাকাতিয়া ও কাঁকড়ী নদীর পানি বেড়ে গিয়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট উপজেলাসহ অধিকাংশ এলাকার ফসলি জমিসহ বসতবাড়ি, পশুপাখির খামার ভেসে যাওয়াসহ, চলাচল ব্যবস্থা চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
মন্তব্য করুন