বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ সৌমেন মন্ডলকে (২৬) নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবার। সন্তান সুস্থ হতে পারবে কিনা, এ নিয়ে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন সবাই।
সৌমেন ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুর বসিলা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন।
সৌমেন মন্ডল যশোরের মনিরামপুর পৌরসভার বিজয়রামপুর গ্রামের শিক্ষক দম্পতি পশুপতি মন্ডল ও রমা রানী মন্ডলের ছেলে। একটি বেসরকারি আইটি ফার্মে চাকরিতে যোগদানের চার দিন পরেই কোমরে গুলিবিদ্ধ হন সৌমেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যার একটু আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে মিছিলে শামিল হন তিনি। এখন বাড়িতে বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি। তার চোখেমুখে আতঙ্ক। সেদিনের সেই ছবি স্মৃতিতে আসতেই আঁতকে উঠছেন।
সৌমেন উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন। সেখানে অনার্স শেষ করেন। এরপর চলতি বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পরীক্ষা দেন। এখনো ফল প্রকাশ হয়নি। এর মধ্যে একটি আইটি ফার্মে চাকরিতে যোগদান করেন।
সৌমেন মন্ডল জানান, তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুর বসিলা এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। গত ১৯ জুলাই জুমার নামাজের পরেই ছাত্র-জনতার মিছিল বের হলে গোটা এলাকা উত্তাল হয়ে পড়ে। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মোহাম্মদপুরের বসিলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা মিছিল বের করে। ওই মিছিলে যেতেই পুলিশের আক্রমণের শিকার হন তিনি।
তিনি আরও জানান, ওপর হতে হেলিকপ্টার থেকে মিছিলে গুলি করা হচ্ছিল। আর নিচ থেকে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে। তিনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঊরুতে কিছু একটা লেগেছে বলে বুঝতে পারি। কিছুক্ষণ পর দেখতে পান তার পরা প্যান্ট রক্তে লাল হয়ে গেছে। এ সময় ছাত্র-জনতা তাকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে দেখতে পান ঊরুতে গুলি লেগে নাভির নিচ দিয়ে বের হয়ে গেছে গুলি। ঊরুর হাড় ভেঙে গেছে।
সৌমেন বলেন, ২৯ জুলাই বাড়িতে ফেরার পর মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান মিন্টুসহ বেশ কয়েকজন খোঁজ খবর নিয়েছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যেহেতু গুলি বের হয়ে গেছে এবং ঊরু স্পর্শকাতর জায়গা হওয়ায় অস্ত্রোপচার ঝুঁকিপূর্ণ। তবে হাড় এমনিতে জোড়া লেগে যাবে।
সৌমেনের বাবা-মা জানান, অর্থের দিকে না তাকিয়ে সৌমেনকে ইঞ্জিনিয়ার করার আশায় ঢাকায় ভর্তি করেন। ছেলেটা সুস্থ হয়ে আর দশজনের মতো স্বাভাবিক হাঁটাচলা করতে পারে, এ জন্য দেশবাসীর কাছে আশীর্বাদ কামনা করেছেন।
এদিকে চোখে গুলিবিদ্ধ আহাদ হোসেনের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন ফিকে হতে চলেছে। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহাদ হোসেন (২৭) মিছিলে শামিল হলে চোখে বুলেটবিদ্ধ হন। তিনি এখন রয়েছেন নিজ বাড়িতে। চোখের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন বিছানায়। আন্দোলনের সফলতা তাকে স্পর্শ করতে পারেনি।
আহাদ হোসেন মনিরামপুর উপজেলার বলিয়ানপুর গ্রামের মৃত সাহেব আলীর ছেলে। অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নে ঢাকার একটি কোচিংয়ে ভর্তি হন। থাকতেন মালিবাগ এলাকায়।
সেদিনের সেই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নাকণ্ঠে আহাদ বলেন, মিছিলে যোগ দিয়ে রামপুরা এলাকায় পৌঁছাতেই পুলিশ তাদের শান্ত থাকতে বলেন। তারা শান্ত হয়ে বসে থাকতেই হঠাৎ রাবার বুলেট তার চোখে এসে লাগে। তিনি আর কিছুই দেখতে পান না।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আহাদের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। স্বজনরা তার চিকিৎসা ও সুস্থতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
আহাদ হোসেনের বড় ভাই মুরাদ হোসেন বলেন, ঢাকায় দুবার চোখের অপারেশন করানো হলেও গুলি বের করা সম্ভব হয়নি। দিন অতিবাহিত হলেই চোখের জটিলতা বাড়ার আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা।
আহাদ হোসেন বলেন, চোখের সামনে অসংখ্য গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর দৃশ্য দেখেছি। আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও এখনো কেউ আমার খোঁজ নেয়নি। এই জন্য কী জীবনবাজি রেখে দেশকে নতুন করে স্বাধীন করেছি।