চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে ৬০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এতে করে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এখানকার সাধারণ মানুষদের। এ ছাড়াও মহুরী প্রজেক্ট এলাকার মৎস্য ঘেরের বাঁধ ভেঙে কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন মৎস্য চাষিরা। বৃষ্টিতে ডুবে আছে সবজি ও রোপা আমন। ভেঙে গেছে বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট পৌরসভা, মিরসরাই পৌরসভার নিম্নাঞ্চল, জোরারগঞ্জ, ইছাখালী, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর, ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা পরিষদ এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। ছোট বড় খানাখন্দে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে উপজেলার মুহুরী প্রজেক্ট-জোরারগঞ্জ সড়কে। এতে করে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এছাড়াও সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় অনেকে জাল দিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করছে।
এদিকে আমনের বীজতলা ও সবজির ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। বৃষ্টিতে কর্মহীন হয়ে পড়েছে দিনমজুর নিম্নআয়ের মানুষ। এ ছাড়া সড়কে কমে গেছে যানবাহনের পরিমাণ। ক্রেতা কম হওয়ায় হতাশ ছোট বড় ব্যবসায়ীরা।
ইছাখালী ইউনিয়নের পানিবন্ধি এরফান উল্ল্যাহ বলেন, আমরা আজ প্রায় ৫ দিন পানিবন্দি হয়ে আছি। রান্না-বান্না করা যাচ্ছে না। খুব কষ্টে দিন পার করছি।
বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুরে মিরসরাই উপজেলা পরিষদ এলাকায় কথা হয় এক পথচারীর সাথে। নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদ নিজে পানিতে ডুবে আছে।
অটোরিকশাচালক মহিউদ্দিন বলেন, গত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে আগের মতো যাত্রী না থাকা পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। এছাড়াও সপ্তাহে ৩ হাজার টাকার কিস্তি আদায় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
উপজেলার মুহুরী প্রজেক্ট এলাকার মৎস্য চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, এর আগেও বৃষ্টিতে অনেক টাকার ক্ষতি হয়েছে। সেই সংকট কাটিয়ে ওঠার আগেই আবার এখন এই বৃষ্টিতে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। এছাড়াও এখানকার প্রায় সবাই ক্ষতির মুখে পড়েছে।
মিরসরাই পৌরসভার বটতল এলাকার পোল্ট্রি ব্যবসায়ী শাহাব উদ্দিন বলেন, আমার দুটি মুরগির খামারে ৩ হাজার বাচ্চা পানিতে ডুবে মারা গেছে। প্রতিটি বাচ্চা প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম বড় হয়েছিল। সবগুলো মুরগি পানিতে ডুবে মরে গেছে। এত আমার প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলার স্থানীয় কৃষক এনায়েত উল্ল্যাহ জানান, গত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে আমরা জমিতে কাজকর্ম করতে পারছি না। এদিক সেদিক থেকে টাকা পয়সা নিয়ে কোনোমতে সংসার চালাচ্ছি।
মিরসরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ জানান, টানা বৃষ্টিতে উপজেলার মৎস্য খামারে বাঁধ ভেঙে অনেক টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। বৃষ্টির পানি চলে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।
মিরসরাই উপজেলা কৃষ্টি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতের রোপা আমান ও সবজি ডুবে গেছে। বৃষ্টি যদি আর নাই তাহলে তেমন ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নাই। এ ছাড়াও উপজেলার খৈয়াছড়া এলাকায় মালচিং প্রদ্ধতিতে চাষ হওয়ার তরমুজের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদের প্রশাসক মাহফুজা জেরিন বলেন, মিরসরাইয়ে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। আমরা জেলা প্রশাসকের জানিয়েছি। এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসন থেকে কোনো সহায়তা আসেনি। আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। গ্রামীণ পর্যায়ে এখনো কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনো জাানা যায়নি।
মন্তব্য করুন