বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন আবু সাঈদ। ৪ আগস্ট সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন থাকলেও দুপুরের পর শুরু হয় তাণ্ডব লীলা। আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় শুরু হয় সংঘর্ষ। আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকায় সাঈদের পা লক্ষ্য করে গুলি করে পুলিশ। ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে সড়কে পড়ে যায় সাঈদ। পরে সঙ্গীরা তাকে নিয়ে যায় হাসপাতালে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের জুলফিকার আলী ও বিলকিস বানু দম্পতির একমাত্র ছেলে সন্তান আবু সাঈদ। হাসপাতালে ছাত্রলীগের ভয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রিলিজ দেয় চিকিৎসক। তীব্র ব্যথা আর অচল পা নিয়ে বাড়িতে চলে যান আবু সাঈদ।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন করে যাত্রা শুরু হয় নতুন বাংলাদেশের। চিকিৎসা নিতে গিয়ে এক্সরে রিপোর্টে দেখা যায় ডান পায়ে প্রায় অর্ধশতাধিক গুলি। উন্নত চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায় তার পরিবার। সেখানে ৮টি গুলি বের করে কোন কারণ ছাড়াই দেওয়া হয় রিলিজ। এখনো তীব্র ব্যথা ও পায়ে ভর দিতে পারছেন না তিনি। পায়ে গুলি থেকে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছে তার পরিবার।
চিকিৎসা নেওয়ার পরে পা স্বাভাবিক না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা। উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান তাদের।
আবু সাঈদের বন্ধু নজরুল বলেন, গুলি লাগার পরে দিনাজপুরে চিকিৎসা করা হয়েছে। কিন্তু এখনো বন্ধু পা ফেলতে পারছে না। তার পায়ে অনেকগুলো ছিটা গুলি আছে। সেগুলো থাকায় হাঁটতে পারছে না। বন্ধুর উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। সে জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
সাঈদের ফুপু কালবেলাকে জানায়, সাঈদ তার বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। হাঁটতে না পারলে তার পরিবারের দায়িত্ব কীভাবে নিবে সে। পড়ালেখা করছে সাঈদ এখন হাঁটতে পারছে না। তার ভালো চিকিৎসার প্রয়োজন যেন সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।
আন্দোলনের প্রতিটি কর্মসূচিতে যুক্ত ছিলেন আবু সাঈদ। বাঁধা দিলেও শোনেননি মায়ের কথা। একমাত্র ছেলে সন্তানের পা স্বাভাবিক না হওয়ায় দুশ্চিন্তায় তার মা।
আবু সাঈদের মা বিলকিস বানু কালবেলাকে জানায়, আমার এক ছেলে আর এক মেয়ে। ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন আমাদের। এখন পায়ের এমন অবস্থায় আমাদের পরিবারের সবাই ভেঙে পরেছি। ছেলের পা যেন দ্রুত ঠিক হয় সে জন্য সকলের কাছে দোয়া চাই।
চিকিৎসক আটটি গুলি বের করলেও এখনো অনেক ছররা গুলি পায়ে ব্যথা দিচ্ছে আবু সাঈদের। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে হাসপাতালে দৌড়ালেও নেই কোন আফসোস। পায়ের বিনিময়ে হলেও দেশের স্বাধীনতার স্বাদে তৃপ্তি পেয়েছেন আবু সাঈদ।
আবু সাঈদ কালবেলাকে জানায়, সকাল থেকে ভালোভাবেই আন্দোলন চলছিল। দুপুরের পরে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। আমাকে শহরের চৌরাস্তায় কাছ থেকে পুলিশ গুলি করে। পরে আমি পড়ে গেলে আশেপাশের সবাই ধরে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক বলে সমস্যা নেই। পরে বাসায় চলে যাই। কিন্তু সমস্যা দেখা দিলে দিনাজপুরে গিয়ে ৮ টি ছররা বুলেট বের করে। এখনো অনেক বুলেট আছে। বুলেট থাকায় পা মাটিতে ফেলতে পারছি না। বাকি বুলেট বের করার জন্য উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। সে জন্য রংপুর বা ঢাকা যেতে হবে।
তিনি বলেন, পায়ের ব্যথার জন্য যত কষ্ট পাচ্ছি তার থেকে বেশি কষ্ট পাচ্ছি আমার শহীদ ভাইদের জন্য। তারপরেও স্বাধীনতা পেয়েছি সে জন্য অনেক ভালো লাগছে।
মন্তব্য করুন