বগুড়ায় সরকার ঘোষিত শর্ত পূরণ না করায় জেলার ২৩৫টি ইটভাটার লাইসেন্স নবায়ন হয়নি। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন ধরে এসব ইটভাটাগুলো চলছে। প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেইনি। এতে ইটভাটাগুলোকে অবৈধ বলে ঘোষণা দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর বগুড়ার সহকারী পরিচালক মাহাতির মোহাম্মদ।
জেলার ২৩৫টি ইটভাটার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইটভাটা শিবগঞ্জ, গাবতলী, শেরপুর, শাজাহানপুর ও ধুনট উপজেলায়। এর মধ্যে শিবগঞ্জে ৪৪টি ইটভাটা রয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে শাজাহানপুর উপজেলা। সেখানে ইটভাটার সংখ্যা ৩৭। গাবতলী উপজেলায় আছে ৩২টি। শেরপুরে ৩১ ও ধুনটে ২৮টি। এ ছাড়া কাহালু, আদমদীঘি, দুপচাঁচিয়া, সোনাতলা, সারিয়াকান্দিতে রয়েছে অসংখ্য ইটভাটা।
ইটভাটা মালিকদের মধ্যে সাবেক সরকারি দলের নেতারাও আছেন। তারাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন সমিতির। এর মধ্যে জেলা আ.লীগের সহসভাপতি আলহাজ আবুল কালাম আজাদ জেলা ইটভাটা মালিক সমিতিরও সভাপতি। গাবতলী উপজেলায় শাপলা ব্রিকস নামে একটি ইটভাটা আছে তার। কোষাধ্যক্ষ মাসুদার রহমান মিলনের (মাসুমা ব্রিকস) ইটভাটাটি সদরের শেখেরকোলা এলাকায়। এটি পরিচালনা করেন সদর উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল ইসলাম রাজ।
অভিযোগ রয়েছে, এসব ইটভাটার বেশিরভাগ লোকালয়ে। আবাদি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ক্লিনিক, হাসপাতাল ও এলজিইডির রাস্তার সামনে। শিবগঞ্জের আমতলীতে এমএইচ ব্রিকস, পূর্ব জাহাঙ্গীরাবাদে মিতালী ট্রেডার্স, আলাদিপুরে এমকে ব্রিকস রাস্তা ও ফসলের মাঠে স্থাপন করা হয়েছে। গাবতলীতেও একই অবস্থা। সেখানে এমজি ব্রিকস, এমএসএস ট্রেডার্স, এমবিএস ব্রিকস। শাজাহানপুরের সুজাবাদ এলাকায় পাঁচটি ইটভাটাও ফসলের মাঠে এবং এলজিইডির রাস্তা ঘেঁষে স্থাপন করা হয়েছে। এসব কারণে বিভিন্ন সংস্থা-ট্রেড, বিএসটিআই, কলকারখানা, ফায়ার সার্ভিস এবং জেলা প্রশাসন থেকে তাদের লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। আয়কর ও ভ্যাট সনদ কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও পায়নি।
পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, ইটভাটা পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ১২০ ফুট উচ্চতার চিমনির পরিবর্তে জিগজ্যাগ পদ্ধতির চুলা ব্যবহার। এলজিইডির রাস্তা থেকে ৫০০ মিটার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ক্লিনিক, হাসপাতাল থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে স্থাপন করতে হবে। আবাদি জমি থেকে মাটি আহরণ করা যাবে না। কোন জায়গা থেকে মাটি আহরণ করা হবে, তার একটি চুক্তিপত্র জমা দিতে হবে ছাড়পত্রের জন্য। মাটির ব্যবহার হ্রাস করতে ৫০ শতাংশ ফাঁপা ইট তৈরি করতে হবে। এসব শর্ত পূরণ হলেই কেবল পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র দিয়ে থাকে। বগুড়ায় যে ২৩৫টি ইটভাটা রয়েছে, এর কোনোটিই এসব শর্ত পূরণ করতে পারেনি। যার কারণে নতুন লাইসেন্স দেওয়া বা নবায়ন বন্ধ রয়েছে প্রায় তিন বছর।
পরিবেশ অধিদপ্তর বগুড়ার সহকারী পরিচালক মাহাতির মোহাম্মদ বলেন, শর্ত পূরণ না করায় একটি ইটভাটাকেও ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। ফলে জেলার সব ইটভাটাই অবৈধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন