নওগাঁর রানীনগরে লাখ টাকা সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে জমিসহ বাণিজ্যিক বয়লার রেজিস্ট্রি (দলিল সম্পাদন) করার অভিযোগ উঠেছে সাব-রেজিস্ট্রার মো. মশিউর রহমানের বিরুদ্ধে। দলিল লেখকের সঙ্গে যোগসাজশে অর্থের বিনিময়ে বাণিজ্যিক বয়লার করা জায়গাকে ধানী জমি দেখিয়ে দলিলটি সম্পাদন করেছেন ওই সাব-রেজিস্ট্রার। এতে ২০ লাখ টাকা মূলের দলিল থেকে ১ লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার।
সম্প্রতি রানীনগর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এই দলিলটি করা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে আলোচনায় এসেছেন সাব-রেজিস্ট্রার মশিউর রহমান ও দলিল লেখক সাদেকুল ইসলাম।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৩ আগস্ট রানীনগর উপজেলার ঘোষগাঁও মৌজার ৬ শতাংশ বয়লার ২০ লাখ টাকা মূল্য ধরে রানীনগর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে একটি বিক্রয় কবলা দলিল সম্পাদন করা হয়। দলিলটির দাতা মো. আল আমিন প্রামানিকসহ চারজন। আর গ্রহীতা মো. আশিকুজ্জামান ও হুমায়ন কবির।
নিয়ম অনুযায়ী ধানী জায়গা-জমির ক্ষেত্রে বিক্রয় কবলা দলিলের জন্য নগদ রেজিস্ট্রি ফি, পে-অর্ডার রেজিস্ট্রি, স্থানীয় কর, উৎসে কর, স্ট্যাম্প ও এনএন ফি আদায় করতে হবে। আর জায়গা-জমিসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বিক্রয় কবলা দলিল হলে রেজিস্ট্রি করার জন্য এফএফ ৫৩-৩ শতাংশ ও ভ্যাট ২ শতাংশ সরকারি খাতে রাজস্ব আদায় করতে হবে। কিন্তু ২০ লাখ টাকা মূল্যের এই দলিল থেকে এসবের কিছুই আদায় করা হয়নি। এক লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বয়লার রেজিস্ট্রি করা হয়েছে।
দলিলের নকল হাতে আসার পর বেরিয়ে আসে এটির নানা অনিয়মের তথ্য। দলিলটির নকল সূত্রে জানা যায়, দলিলের প্রথম পাতায় শ্রেণি দেখানো হয়েছে ধানী। আবার দলিলের ৬নং পাতায় শ্রেণি দেখানো হয়েছে বয়লার। এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলিলকৃত জায়গাটির শ্রেণি ধানী নয়, বাস্তবে জায়গাটি বয়লার। সেখানে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বয়লার রয়েছে।
অনেকেই বলেন, প্রতিনিয়তই রানীনগর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এমন কর্মকাণ্ড হয়ে আসছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানার পরও রহস্যজনক কারণে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। তাই দিন দিন অনিয়ম-দুর্নীতির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে এই সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। দ্রুত এসবের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তাদের।
দলিলের বিষয়ে মোবাইল ফোনে রানীনগর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক মো. সাদেকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, দলিল আমি লিখে দিয়েছি, দলিল অন্যজনের কথা বলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ফোনটি অন্য এক মুহুরিকে দেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রানীনগর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রার মো. মশিউর রহমান কালবেলাকে বলেন, সরকারি রাজস্ব আদায় হবে, কিন্তু নেওয়া হয়নি এমন কিছু আমার জানা নেই। আর আপনি যেহেতু বললেন বিষয়টি খতিয়ে দেখে আপনাকে আমি জানাব। যেহেতু সেখানে স্থাপনা নেই, সেহেতু আমি ওই রাজস্ব আদায় করতে পারি না।
এক দলিলে দুই রকম শ্রেণি থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। অপর প্রশ্নে তিনি আরও বলেন, আমার জানামতে এই দলিল সম্পাদনে আমি কোনো ভুল করিনি। তার পরও যদি সুনির্দিষ্ট কোনো ভুলের বিষয় থেকে থাকে, তাহলে আমাকে দেখাতে পারেন। আমি নতুন অফিসার, সংশোধন হওয়ার চেষ্টা করব।
এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা রেজিস্ট্রার শরীফ তোরাব হোসেন বলেন, কেউ যদি লিখিত অভিযোগ দেয়, তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন