বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অভ্যুত্থানের পর গত ১২ আগস্ট থেকে থানায় ফিরতে থাকে পুলিশ। প্রথম দিন কেউ কেউ ফিরলেও অধিকাংশ কাজে যোগদান করেন ১৫ আগস্ট, বৃহস্পতিবার।
তবে কাজে ফিরলেও মনোবল ফেরেনি পুলিশের। অরক্ষিত থানায় ফিরে পাওয়া যায়নি বসার জায়গা। পাওয়া যায়নি রেখে যাওয়া জামাকাপড়গুলোও।
সোমবার (১৯ আগস্ট) বিভিন্ন থানায় সরেজমিন দেখা যায়, পুলিশ সদস্যরা নতুন করে ফার্নিচার কিনছেন। নতুন করে গোচ্ছেন অফিস। তবে ভোগান্তিতে পড়েছেন লুট হওয়ায় জিনিসপত্র নিয়ে।
পদত্যাগ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর সিলেটের বিভিন্ন থানায় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। আগুন দেওয়া হয় অফিস, বিভিন্ন স্থাপনায় ও গাড়িতে। আগুনে পুড়ে গেছে বিভিন্ন মামলার গুরুত্বপূর্ণ নথি। আবার কোনো কোনো থানায় আগুনে পুড়ে নিশ্চিহ্ন হয় সব ধরনের ডকুমেন্টস। সিলেটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিয়ানীবাজার থানা। দুর্বৃত্তরা থানায় হামলা ও ভাঙচুর করে সবকিছু লুট করে নিয়ে যায়।
পরে থানার ভেতর ও বাইরে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুড়ে যায় সব ধরনের নথি, সরকারি ও ব্যক্তিগত ব্যবহারের মোটরসাইকেল। এ ছাড়া কোতোয়ালি মডেল থানা, জালালাবাদ থানা, এয়ারপোর্ট থানা, শাহপরাণ থানা, দ. সুরমা থানায় হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। নগরের লামাবাজার, বন্দরবাজার ও সোবহানীঘাট, আলমপুর পুলিশ ফাঁড়িতেও হামলা, অগ্নিসংযোগ ও অস্ত্র লুট হয়।
সিলেট জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের পর একাধিকবার আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় কার্যালয়ের সামনে রাখা কয়েকটি গাড়ি ও মোটরসাইকেল আগুনে পুড়ে যায়। পুড়ে যায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ের আসবাব ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। আতঙ্কে তখন পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী কার্যালয় ছেড়ে সরে যান।
সিলেট জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সম্রাট তালুকদার কালবেলাকে বলেন, সব থানা কমবেশি আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি কিছু থানায় কম আবার কিছু থানায় বেশি। বিয়ানীবাজার থানা আক্রান্ত বেশি হওয়ায় ওখানে আগুনে সবকিছু পুড়ে গেছে। আপাতত পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অফিস করার মতো কোনো পরিবেশ নেই; তাই জেলা পুলিশ লাইন্সের রিজার্ভ অফিসে কার্যক্রম চলছে। সব থানায় কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে, তবে গাড়ি পোড়ানোর কারণে কিছু থানা বাইরে টহল দিতে পারছে না।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি নুনু মিয়া কালবেলাকে বলেন, আমি থানায় নতুন যোগদান করেছি। থানায় নতুন এসে যা দেখলাম, থানা একটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রগুলো এখন সার্কেল অফিস বা কমিশনার অফিস বা আদালত থেকে সংগ্রহ করতে হবে। আমাদের একটি অস্ত্র ছাড়া বাকি সব অস্ত্র পেয়েছি। কার্যক্রম মোটামুটি চালু করেছি।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, আমাদের মেট্রোপলিটন পুলিশের পাঁচ থানা ও চার পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুট ও অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। কার্যক্রম চলমান আছে। অনেক মামলার নথি এবং অন্যান্য কাগজপত্র নিয়ে গেছে বা রাস্তায় ফেলে গেছে। সিডিএমএস হতে ফের সিডিগুলো ডাউনলোড করে এবং আদালতের জুডিশিয়াল নথির কপি সংগ্রহ করে মামলার কার্যক্রম চলমান রাখা হবে। সাময়িকভাবে অসুবিধা হলেও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হবে না। কোনো থানার অভ্যন্তরে আগুন দেওয়া হয়নি। কয়েকটি ফাঁড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শাহপরাণ থানা সম্পূর্ণ অক্ষত। অন্যান্য থানায় হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে।
সিলেট জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান কালবেলাকে বলেন, পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সব কার্যক্রম জেলা পুলিশের রিজার্ভ অফিসে চলছে। আমাদের সব থানায় এখন অস্ত্রসহ কার্যক্রম চালু হয়েছে। থানায় অভিযোগ, জিডি, টহল ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্সসহ বেসিক সব কার্যক্রম চলমান আছে।
মন্তব্য করুন