লঞ্চ ঘাটে রিকশা চালালে দিতে হয় মাসোহারা। দীর্ঘদিনের এই মাসোহারা দিতে অস্বীকার করায় এখনো নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন রিকশাচালকরা। দেশের ব্যস্ততম নৌরুট রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটে নির্মম নির্যাতনের শিকার এক রিকশাচালক।
রোববার (১৮ আগস্ট) দুপুর দেড়টার দিকে দৌলতদিয়া লঞ্চ টার্মিনালে এ ঘটনা ঘটে। মাসোহারা না দেওয়ায় রিকশাচালক মো. মিরাজ শেখ মারধরের শিকার হয়েছেন। অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি প্রাণবন্ধু চন্দ্র বিশ্বাস।
চাঁদা আদায়কারীরা হলেন দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাট সংলগ্ন সিদ্দিক কাজীর পাড়ার আইয়ূব আলী মন্ডলের ছেলে এবং গোয়ালন্দ পৌরসভার মেয়র নজরুল মন্ডলের ভাতিজা শাওন মন্ডল।
অভিযোগকারী রিকশাচালক মিরাজ শেখ বলেন, গত তিন বছর ধরে শাওন মন্ডলকে প্রতিমাসে ১ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগের ছেলে ও পৌরসভার মেয়রের ভাতিজা ভয়ে আমরা কেউ কথা বলার সাহস পাইনি। কিন্তু সরকার পতনের পর আমরা সবাই চাঁদা দিতে অস্বীকার করি। শাওন মন্ডল আমাকে ফোন দিয়ে লঞ্চ টার্মিনালে নিয়ে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে।
আরেক চালক শফিক শেখ বলেন, গত তিন-চার বছর ধরে শাওন মন্ডল মাসিক চাঁদা নিয়ে থাকে। মাঝে একবার চাঁদা না দেওয়ায় সে আমাকে মেরে হাসপাতালে পাঠায়। আমি বেশ কিছুদিন হাসপাতালে থেকে তার বাপ চাচার কাছে বিচারের জন্য ঘুরেছি কিন্তু তারা কোনো বিচার করেনি। পরে সময়ে আর লঞ্চ ঘাটে রিকশা চালাইনি। উপরে রিকশা চালাই। পরে সময়ে একদিন উপরে এসে আবার আমাকে ধরে পেটায় আমি কেন লঞ্চ ঘাটে রিকশা চালাই না এবং তাদের টাকা পয়সা দেই না।
সেসময় আবার আমি তার বাপ চাচার কাছে বিচারের জন্য ঘুরেছি কিন্তু তারা বলে এ ব্যাপারে আমরা কিছু করতে পারব না। আমরা গরিব মানুষ ভাড়া রিকশা চালাই তাকে যদি মাসে দেড় হাজার টাকা দেই তাহলে বউ বাচ্চা নিয়ে সংসার চালাব কী করে। তখন ভয়ে আমরা মুখ খুলতে পারিনি। তাদের নির্যাতনের শিকার হয়েছে এই ঘাটের শত শত মানুষ।
এ ছাড়া লিটন নামে আরেক চালক বলেন, আমি নিয়মিত তাদের মাসোহারা দিয়েই রিকশা চালাতাম হঠাৎ করে কয়েক মাস এখানে রিকশা চালাইনি। তারপর আবার এসে রিকশা চালানো শুরু করলে শাওন মন্ডল আমার রিকশা আটকে দেয় এবং আমার কাছে থাকা ৩শ টাকা নিয়ে যায়। পরে তাকে ছয় হাজার টাকা দিয়ে রিকশা ছাড়াতে হয়।
এ সময় তার বাবা ও চাচাকে জানালেও তারা এ ব্যাপারে কোনো সহযোগিতা করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। শাওন মন্ডলের আরেক চাচা মোস্তফা মন্ডলের টার্মিনালের অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগে কয়েকদিন আগে সোচ্চার হয়ে উঠে চালকরা। তখন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্ররা ভাড়া নির্ধারন করে দেন।
এ ছাড়া এই শাওন মন্ডলের বিরুদ্ধে ডাকাতি, চাঁদাবাজির মামলা করেও কোনো লাভ হয়নি। পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়াতো ফলে কেউ কিছু বলতে সাহস পেত না।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শাওন মন্ডলের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, টাকা নেওয়ার অভিযোগ সত্যি নয়। রিকশাওয়ালারা যাত্রীদের হয়রানি করে তাই তাদের রাগ হয়ে মেরেছি।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি প্রাণবন্ধু চন্দ্র বিশ্বাস কালবেলাকে বলেন, এ ব্যাপারে আমরা একটা অভিযোগ পেয়েছি। শিগগিরই তদন্ত করে আসামিকে আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে।
মন্তব্য করুন