শরীয়তপুরের ডামুড্যায় দুই প্রতিবন্ধী বোনের টাকা আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে তাদের চাচা যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে। সে টাকা চাইতে গেলে তাদের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি দায়ের করা হয়েছে একটি মামলা। টাকা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দুই প্রতিবন্ধী বোন। টাকা ফেরত পাওয়ার পাশাপাশি মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, ডামুড্যা পৌরসভার দক্ষিণ ডামুড্যা এলাকার সরকারি কর্মচারী শামসুদ্দিন করাতীর ছয় মেয়ে। এর মধ্যে পাঁচজনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। মারা গেছে দুজন। বাকি চার সন্তানের মধ্যে শাহিদা, রাশিদা ও হাসিনা শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও সুস্থ এবং স্বাভাবিক রয়েছেন ছোট মেয়ে সালমা। বাবা শামসুদ্দিন করাতী মারা যাওয়ার আগে তার সব সম্পত্তি লিখে দিয়ে যান ছয় মেয়েকে। বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি শামসুদ্দিন করাতীর চাচাতো ভাই ও স্থানীয় ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী করাতী।
সম্পত্তির একটি অংশ বিক্রি করা হলে সে টাকা প্রতিবন্ধী বোনদের নামে ব্যাংকে রাখার নাম করে নিয়ে যান তিনি। পরবর্তীতে সে টাকা চাওয়া হলে ফেরত দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এমনকি তারা তাদের ব্যাংকের চেক বই চাইলে তাদের ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে চাচা মোহাম্মদ আলীর ব্যাংকে টাকা জমা রাখার পুরোনো একটি রসিদ বই। দুই মাস আগে মোহাম্মদ আলী মালয়েশিয়া চলে গেলে ওই চার বোনের নামে আদালতে একটি মামলা করেন তাদের চাচি কাকন বেগম।
ভুক্তভোগী শাহিদা বলেন, মোহাম্মদ আলী ব্যাংকে টাকা রাখার কথা বলে এখন আমাকে টাকা দেয় না। আমার চেক বইটাও নিয়ে গেছে। টাকা চাইলে বলে কিসের টাকা। আপনারা আমার টাকাটা একটু উঠাইয়া দেন।
আরেক বোন রাশিদা বলেন, চাচার কাছে টাকা চাইলে আমাদের অত্যাচার করে, বকা দেয়। আমরা অনেক নিরুপায়। আমাদের সাহায্য করার মতো কেউ নাই। আমরা আমাদের টাকাগুলা ফেরত চাই।
ছোট বোন সালমা বলেন, বাবা মারা যাওয়ার আগে আমাদের ছয় বোনের নামে সম্পত্তি লিখে দিয়ে যায়। আমার ছয় বোনের মধ্যে পাঁচজন প্রতিবন্ধী। দুজন মারা গেছে। আমাদের এই সম্পত্তি নিয়ে চাচায় মামলা দিয়েছে। আমি এখন এই প্রতিবন্ধী তিন বোনকে নিয়ে কীভাবে আদালতে যাব। আমরা নিজেরাই খেতে পারি না। এখন কোর্ট চালাব কীভাবে। আমরা সরকারের কাছে সাহায্য চাই। যাতে এ মামলা উঠিয়ে দিয়ে সুষ্ঠু একটা সমাধান করে দেয়।
প্রতিবেশী মো. জুলহাস পেদা বলেন, আমরা এ প্রতিবন্ধী পরিবারের সব সুখের ও দুঃখের সঙ্গী হয়ে থাকতাম। এ বিষয়টি মোহাম্মদ আলী ও তার পরিবারের ভালো লাগেনি। যে কারণে আমরা দূরে সরে যাই। এ সুযোগে মোহাম্মদ আলী প্রতিবন্ধীদের জায়গা ও টাকা-পয়সা নিয়ে নয়-ছয় শুরু করে। আমি এবং সচেতন এলাকাবাসী মোহাম্মদ আলীর বিচার চাই।
জমি সংক্রান্ত মামলা দায়েরের কথা স্বীকার করলেও টাকার বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী কাকন বেগম। তিনি বলেন, আমার স্বামী কয়েক মাস আগে বিদেশ চলে গেছে। এরপর ওরা দুই বোন আমাদের চৌহদ্দি দেওয়া সম্পত্তি বিক্রি করতে গেছে। তাই আমি মামলা করেছি। তবে ব্যাংকে টাকা রাখার বিষয়ে আমি জানি না। সেটা আপনারা (সাংবাদিকরা) ম্যানেজারকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন।
ডামুড্যা পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম রাজা ছৈয়াল কালবেলাকে বলেন, প্রতিবন্ধী পরিবারটির পাশে আমরা সবসময় ছিলাম। তাদের বিরুদ্ধে মোহাম্মদ আলীর পরিবার মামলা করেছে বিষয়টি জানা ছিল না। তা ছাড়া জানতে পারলাম প্রতিবন্ধী বোনদের টাকা ব্যাংকে রাখার নামে ফেরত দিচ্ছে না। বিষয়টি আসলেই অমানবিক। আমরা স্থানীয়ভাবে উভয়পক্ষকে ডেকে মীমাংসা করার চেষ্টা করব।
মন্তব্য করুন