কুমিল্লায় ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের সময় কোটবাড়ি বিশ্বরোড নন্দনপুরে মাসুম মিয়া নামে একজন নিহতের ঘটনায় সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহার ও তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র তাহসীন বাহার সূচনাসহ ৬২ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৪০০ জনকে।
রোববার (১৮ আগস্ট) রাতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় এ হত্যা মামলা করেন দিশাবন্দ এলাকার বাসিন্দা আবদুল হান্নান।
নিহত মাসুম মিয়া কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর রামপুরের শাহিন মিয়ার ছেলে। কুমিল্লার সদর দক্ষিণের কোটবাড়ি নন্দনপুরে ৪ আগস্ট শিক্ষার্থী ও আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন তিনি। পরিচয় না পাওয়ায় তাকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছিল।
সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি আলমগীর হোসেন ভূইয়া কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয় সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহারকে। দ্বিতীয় আসামি করা হয় তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের পলাতক মেয়র তাহসিন বাহার সূচনাকে। এ ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- কুমিল্লা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম টুটুল, মহানগর আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ।
সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাবলু, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন, সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আহম্মেদ নিয়াজ পাভেল, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম রিন্টু, সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান পিয়াস, কুসিক কাউন্সিলর হাবিবুর আল আমিন সাদী, ক্রিকেট বোর্ডের কাউন্সিলর সাইফুল আলম রনি, কুসিক কাউন্সিলর সরকার মাহমুদ জাবেদ।
বাগিচাগাঁওয়ের বাসিন্দা কাউসার জামান কায়েস, তালপুকুর পাড় এলাকার সুজন দত্ত, কালিয়াজুড়ির মুরাদ মিয়া, কাউন্সিলর আজাদ হোসেন, কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন, কাউন্সিলর ইকরামুল হক, রেসকোর্সের আবদুল কাইয়ূম, কাউন্সিলর আবুল হাসান, সাবেক কাউন্সিলর মাসুদুর রহমান মাসুদ, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আজিজুল হক শিহানু, মধ্যম আশ্রাফপুরের নাজমুল ইসলাম শাওন, ছাত্রলীগ নেতা সালেহ আহম্মেদ রাসেল।
অশোকতলার শাহ আলম খান, শাসনগাছার আবু হেনা, সাক্কু, ধর্মপুরের শহীদুল ইসলাম চপল, ফখরুল ইসলাম রুবেল, কাউন্সিলর গাজী গোলাম সরওয়ার শিপন, সদর দক্ষিণের শ্রীমন্তপুর এলাকার দুলাল হোসেন অপু, নেউরা এলাকার জাকির হোসেন, পাথুরিয়াপাড়ার প্রিতুল, শাকতলা মীর পুকুর পাড়ের রবিন, কালা মোস্তফা, অশোকতলার সাইফুল ইসলাম খোকন, শ্রীভল্লভপুরের মো. মেহেদী, পাঁচথুবির চেয়ারম্যান হাসান রাফি রাজু, শিমপুরের মনিরুজ্জামান মনির।
ব্রাহ্মণপাড়ার ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান শরীফ, শিমপুরের নিতান্ত, শ্রীভল্লবপুরের আবদুল মালেক ভূঞা, মো. খাইরুল হাসান, মো. হানিফ দুলাল, ঢুলিপাড়ার রাশেদুজ্জামান রাশেদ, শাসনগাছার জালাল, দক্ষিণ বিজয়পুরের মো. জাফর আহাম্মদ শিপন ,মোস্তফাপুরের মুন্সীবাড়ির মো. হাসান, মনোহরপুরের মোখলেছুর রহমান, বাগিচাগাওয়ের বাপ্পি।
দৌলতপুরের ছায়া বিতানের জালাল (পিচ্চি জালাল), মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি নুর মোহাম্মদ সোহেল, দক্ষিণ চর্থার কাউসার আহমেদ খন্দকার ও আকাশ, মুন্সেফবাড়ির ফরহাদ উল্লাহ, লক্ষীনগরের কবির হোসেন, দিশাবন্দের গোলাম মোস্তফা, দুলাল মিয়া, জিয়াউর রহমান, লক্ষীনগরের জালাল, সুজানগর চৌমুহনীর জালাল ও হানিফ।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, আসামিরা দীর্ঘদিন ক্ষমতার অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে কুমিল্লার স্থানীয় জনগণসহ ছাত্র-জনতার ওপর অন্যায় অত্যাচার করে আসছে। গত ৪ আগস্ট ১ নম্বর আসামি বাহাউদ্দিন বাহারের হুকুমে আসামিরাসহ অজ্ঞাত ৪০০ জন আসামি প্রাণঘাতী মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা করে।
২ নম্বর আসামি তাহসীন বাহার সূচনার হুকুমে হত্যার উদ্দেশ্যে ছাত্র-জনতার ওপর অতর্কিততভাবে হামলা করলে মাসুম মিয়াসহ (২০) আরও অনেকে গুলিবিদ্ধ হন। তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তাৎক্ষণিকভাবে তার কোনো পরিচয় না পাওয়ায় লাশ অজ্ঞাত হিসেবে কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই মো. মনির হোসেন সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত শেষে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হলে লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়।
মামলার বাদী ও নিহতের আত্মীয়-স্বজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাশের ছবি দেখে শনাক্ত করে। পরবর্তীতে তার আত্মীয়স্বজন সাক্ষীদের সঙ্গে আলোচনা করে আসামিদের নাম ও ঠিকানা সংগ্রহ করে মামলা করে।
ওসি আলমগীর হোসেন ভূইয়া বলেন, রোববার রাতে সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহার ও তার মেয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র তাহসীন বাহার সূচিনাসহ ৬২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। দ্রুতসময়ের মধ্যে আমরা আসামিদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করব।
মন্তব্য করুন