ঘুরতে গিয়ে একে অপরের দেখা। পরে ফোন নম্বর বিনিময়ে কথা বলার এক পর্যায়ে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। অতঃপর দুজনের মধ্যে গড়ে উঠে ভালোবাসার সম্পর্ক। দীর্ঘ ৯ মাসের ভালোবাসা গড়ায় বিয়ের সম্পর্কে। তরুণী তনুশ্রী দাস ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করেন প্রেমিক কবির হোসেনকে।
দুজনে কয়েক দিন সংসার করলেও বিয়ে মানতে নারাজ তরুণীর পরিবার। তাদের মেয়েকে স্বামীর কাছ থেকে দূরে রাখতে ভারতে আত্মীয়ের বাসায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন স্বামী কবির।
জানা গেছে, রংপুর কারমাইকেল কলেজ মাঠে রংপুর জেলা শহরের দর্শনা এলাকার কবির হোসনের সঙ্গে পরিচয় হয় ঠাকুরগাঁও জেলার চন্ডিপুর এলাকার তরুণী তনুশ্রী দাসের। ৯ মাস প্রেমের সম্পর্কের পর গত বছরের ৫ জুন ধর্মান্তিরত হয়ে বিয়ে করেন কবির হোসেনকে। নাম রাখেন সিদরাতুল মুনতাহা। কয়েক দিন সংসারও করেন দুজনে। তবে বিয়ের কয়েক দিন পরই জানতে পারে তরুণীর পরিবার। সে বিয়ে মেনে নেননি তারা।
এদিকে বিয়ের ১৮/২০ দিন পর মেয়েকে ঠাকুরগাঁওয়ে তুলে নিয়ে আসে তার পরিবার। স্বামী কবিরকে আটক করে তার বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলা করে। মামলায় একদিন কারাভোগও করেন কবির। তবে আদালতে তরুণীর জবানবন্দিতে মুক্তি পায় সে। তবে আদালত শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তরুণীকে তার পরিবার জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে করে বাড়িতে নিয়ে যায় এবং আটকে রাখে।
কবির জামিনে মুক্তি পেয়ে তার স্ত্রীকে অনেক খোঁজাখুঁজি করলেও সন্ধান পাননি। গত ১৪ মাসে তার স্ত্রীকে খুঁজেছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে। অবশেষে জানতে পারেন তার স্ত্রীকে তার বাবা-মা অমতে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে নিয়ে যাচ্ছেন। স্বামী কবির হোসেন ছুটে যান পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনে। বিষয়টি তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান।
রোববার (১৮ আগস্ট) দুপুরে তরুণীর বাবা-মা তাদের মেয়েকে বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের কার্যক্রম শেষ করে বিজিবি চেকপোস্টে গেলে সে সময় বাধা হয়ে দাঁড়ান কবির হোসেন। পরে তিনি তাদের বিয়ের যাবতীয় কাগজপত্র দেখান। তারা দুজন একে অপরকে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন এমন জবানবন্দি দেন। মেয়েটি তার স্বামীর সঙ্গে সংসার করবেন এমন স্বীকারোক্তি দেন। তরুণীর বাবা-মায়ের সামনে বিজিবি কবিরের কাছে তার স্ত্রী সিদ্রাতুল মুনতাহাকে তুলে দেন।
কবির হোসেন কালবেলাকে বলেন, আমরা ভালোবেসে একে অপরকে বিয়ে করেছিলাম। কয়েক দিন সংসারও করেছি। কিন্তু হঠাৎ একদিন আমার স্ত্রীর বাড়ির লোকজন আমাদের তুলে ঠাকুরগাঁওয়ে নিয়ে রাখে। পরে আমার স্ত্রীকে আটকে রেখে আমাকে ধর্ষণ ও অপহরণের মামলা দেয় । আমি একদিন জেলও খেটেছি। পরে আমার স্ত্রীর জবানবন্দিতে মুক্তি পাই।
তিনি বলেন, এতদিন আমার স্ত্রীকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন আটকে রেখেছিল। তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। যখন শুনলাম আমার স্ত্রীকে তার অমতে ভারতে তার আত্মীয়ের বাসায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তখন আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। ইমিগ্রেশন করার পর তারা যখন বিজিবির চেকপোস্টে যায় তখন আমি অভিযোগ করি। আমাদের বিয়ের যাবতীয় কাগজপত্র উপস্থাপন করি। আমার স্ত্রী ভারতে যেতে অনীহা প্রকাশ করেন এবং আমার সঙ্গে সংসার করতে চান। পরে বিজিবি সদস্যদের সহযোগিতায় আমি আমার স্ত্রীকে ফিরে পাই। সবার কাছে দোয়া চাই আমরা যেন সুখে-শান্তিতে সংসার করতে পারি।
কবিরের প্রতিবেশী মারুফ হাসান বলেন, তারা দুজন ভালোবেসে ঘর বেঁধেছিল। তারা দুজন ভিন্ন ধর্মের হওয়ায় শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেনে নিচ্ছিল না। কবিরের নামে মিথ্যা মামলা করে তারা। আজকে ভারতে কবিরের স্ত্রীকে নিয়ে যাচ্ছিল তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। পরে কবির এসে তাদের বিয়ের কাগজপত্র দেখালে বিজিবির সহযোগিতায় স্ত্রীকে ফিরে পায় কবির।
মন্তব্য করুন