বাসাবাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে জানিয়ে থানায় মামলা করতে যান দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আফসার আলী। একই সময়ে থানায় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি প্রতিনিধিদল। এ সময় কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়ে হুমকি দেন তিনি।
এরপর শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে ঘিরে ধরেন চেয়ারম্যান আফসার আলীকে। তাদের তোপের মুখে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগের মৌখিক ঘোষণা দেন। পরে শিক্ষার্থীদেরই করা একটি মামলায় থানা চত্বরে গ্রেপ্তার হন আফসার আলী।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) রাতে দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ থানা চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের পক্ষে দায়ের করা ওই মামলার বাদী হয়েছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়সাল মোস্তাক।
উপজেলা চেয়ারম্যান আফসার আলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সেতাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে শিক্ষার্থীরা একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করেন। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান আফসার আলীর নির্দেশে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী মিছিলে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। মারধর করে গুম করে ফেলার হুমকি দেন এবং মেয়েদের শ্লীলতাহানি ঘটান। তাদের হুমকি-ধমকিতে এলাকার কোনো চিকিৎসাকেন্দ্রে গিয়ে চিকিৎসা পর্যন্ত নিতে পারেননি শিক্ষার্থীরা।
মামলায় আসামি হিসেবে সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও দিনাজপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তার ব্যক্তিগত সচিব আবদুল বাশারসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ জনকে।
বোচাগঞ্জ পৌর শহরের এক বাসিন্দা বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে পার্শ্ববর্তী এক উপজেলায় স্বপরিবারে আত্মগোপনে ছিলেন চেয়ারম্যান আফসার আলী। শুক্রবার সন্ধ্যার আগে স্ত্রী-সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে থানায় আসেন মামলা করতে। এ সময় বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে থানার ওসিকে প্রতিটি মামলায় নিরপেক্ষ তদন্ত করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এটা আওয়ামী লীগের দেশ না, এটা স্বাধীন বাংলাদেশ। শিক্ষার্থীদের মুখে এমন কথা শুনে তাদের ওপর চড়াও হন এবং হুমকি দেন শিক্ষার্থীদের।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেওয়া শুরু করলে বাইরে থেকে আরও কিছু শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন উপস্থিত হয়ে চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেন। পরে মাইক হাতে নিয়ে তিনি মৌখিক পদত্যাগের ঘোষণা দেন এবং সাত কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে পদত্যাগ করবেন বলে জানান। এ সময় বোচাগঞ্জ উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালনকারী সেনাবাহিনীর সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
বোচাগঞ্জ থানার ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক মোহাম্মদ রাসেল বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান থানায় এসেছিলেন। এ সময় থানায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চেয়ারম্যানের কথাকাটাকাটি হয়। পরে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে তিনি মৌখিক পদত্যাগ করেন। শিক্ষার্থীদের দায়ের করা একটি মামলায় চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করে শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন