ফরিদপুরের সালথা থানা পুলিশের সাবেক দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলার আবেদন করা হয়েছে। এই দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন সালথা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সাদিক (৪৫) ও উপপরিদর্শক (এসআই) তন্ময় চক্রবর্তীর (৩৫)।
বুধবার (১৫ আগস্ট) ফরিদপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩নং আমলী আদালতে মো. হাফিজুর রহমান মুন্নু (৬৫) নামের এক ব্যক্তি এই অভিযোগ করেন। পরে আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. মারুফ হাসান অভিযোগটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
শেখ সাদিক চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গার বারাদি গ্রামের শেখ আমিনউদ্দীনের ছেলে। ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি সালথা থানায় ওসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত আছেন। আর এসআই তন্ময় চক্রবর্তী রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার ভররামদিয়া গ্রামের তাপস চক্রবর্তীর ছেলে। তিনি বর্তমানে বোয়ালমারী থানায় কর্মরত রয়েছেন।
মামলার বাদী সালথার ভাওয়াল গ্রামের হাফিজুর রহমান মুন্নু গ্রামীণ ব্যাংকের একজন অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম। তিনি আরজিতে বলেন, চাকরি থেকে অবসরে যেয়ে তিনি গ্রামে ফিরে বিএনপির দলীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তাকে ওসি সেখ সাদিক ও এসআই তন্ময় বিভিন্ন সময়ে হুমকি দিয়েছেন।
ওই পুলিশ কর্মকর্তারা বাদীকে উদ্দেশ করে ‘আপনি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে অনেক টাকা উপার্জন করে গ্রামে এসে রাজনীতি করছেন’ বলত বলেও অভিযোগ করা হয়।
তারা বাদীর কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গত বছরের ১১ মার্চ রাতে তাকে আটক করেন। দাবি করা টাকা না পেলে থানায় নিয়ে নির্যাতন ও হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। তিনি প্রাণভয়ে নানাভাবে তাৎক্ষণিক ৫ লাখ টাকা দেন। এরপরও তাকে থানায় নিয়ে যেয়ে রাতভর অমানুষিক নির্যাতন করে পরের দিন একটি বিস্ফোরক মামলায় আদালতে চালান করে।
হাফিজুর রহমান বলেন, তাকে মিথ্যা মামলায় আদালতে চালান দেওয়া হয় এবং এ ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে ক্রসফায়ারের হুমকি দেওয়া হয়। এরপর দীর্ঘদিন কারাভোগের পর ওই মামলায় আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে আসেন। সে সময় ভয়ে ভীত হওয়ায় তিনি আদালতে মামলা করতে পারেন নাই। এখন দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে আসায় এবং অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় তিনি মামলাটি দায়ের করেছেন।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মামুন অর রশীদ বলেন, বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে বিজ্ঞ আদালত পিবিআইকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে, চাঁদাবাজির বিষয়টি ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক বলে দাবি করেছেন সালথা থানার সাবেক ওসি মো. শেখ সাদিক। তিনি কালবেলাকে বলেন, আমি কখনোই কারো কাছে থেকে চাঁদাবাজি ও ঘুষ দাবি করিনি। আমি সালথায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করে গেছি। আমাকে অযথা হয়রানি করার জন্য এ মামলাটি করা হয়েছে। আমি আদালতের কাছে ন্যায়বিচার দাবি করছি।
মামলার অন্য আসামি এসআই তন্ময় চক্রবর্তী কালবেলালে বলেন, আমার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত এ মামলা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক। আশা করি আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাব।
মন্তব্য করুন