বাংলাদেশের সোনালি আঁশ খ্যাত পাট চাষে দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছেন রংপুরের পীরগাছার কৃষকরা। অতি খরা, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, কৃষি শ্রমিকের অতিরিক্ত মজুরি, জাগ দেওয়ার সময় পানির সংকট, খরচের তুলনায় দাম না পাওয়া, অন্য আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়াসহ নানা কারণে পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন সেখানকার কৃষকরা।
সরেজমিনে আদম কুটিপাড়া গ্রামের কৃষক আফতাব উদ্দিন বলেন, বর্তমানে ১ বিঘা জমির পাট কাটতে কৃষি শ্রমিকদের দিতে হয় ৫ হাজার টাকা। পাটের আঁশ ছাড়াতে দিতে হয় আরও ৫ হাজার টাকা। এর সঙ্গে জমি চাষ, বীজ, সার, কীটনাশক, পানি সেচ সবমিলে প্রায় ১৫-১৬ হাজার টাকা খরচ হয়। পাট হয় ৫-৬ মণ। পাটের বর্তমানে যে বাজার তাতে লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচ তোলাই মুশকিল।
শিবদেব গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কৃষি শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ার কারণে পাট আবাদে এখন খরচ বেশি। সেই তুলনায় উৎপাদন কম। তবে যারা নিজে খাটতে পারে তারা একটু লাভ করতে পারে। আগে অনেক জমিতে পাট চাষ করতাম। এবার মাত্র ২৪ শতক জমিতে পাটের চাষ করেছি। পাটের চেয়ে ভুট্টা চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা দিন দিন ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন।
এদিকে এ উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে পাটের চাষ মোটামুটি লক্ষ করা গেলেও অন্যান্য এলাকায় পাটের চাষ অনেকটা কম। ওইসব এলাকার কৃষকরা বলছেন, বেশ কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে পাট জাগ দেওয়ার সময় পর্যাপ্ত পানি থাকছে না। আগেরকার দিনে পুকুর-ডোবা-নালায় এই সময়টায় পর্যাপ্ত পানি থাকত। এখন পুকুরে মাছ চাষ করার কারণে সেখানে আর পাট জাগ দেওয়া হয় না। বিল যে দুই-চারটা আছে তাও অনেক দূরে দূরে। ডোবা, নালায় পানি না থাকায় পাট কেটে বৃষ্টির পানির অপেক্ষায় জমিতেই ফেলে রাখতে হয় দিনের পর দিন। সময়মতো পাট না জাগ দিতে পারায় অনেক সময় পাটের আঁশ মানসম্মত হয় না। ফলে দামও ভালো পাওয়া যায় না। এমনকি বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকতে থাকতে অনেক পাট শুকিয়েও যায়। পাট চাষে আগ্রহ কমার এটা একটা বড় কারণ।
পাট ব্যবসায়ী মো. আশিকুর রহমান বলেন, এবার আমরা মানভেদে প্রতি মণ পাট ২৬০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৪০০ টাকা দরে কিনছি। গত বছরের তুলনায় এবার বাজারে পাট অনেক কম। কৃষকরা খরচের তুলনায় দাম পান না। তাই পাট চাষ কমছে। মিল-কারখানাগুলো বন্ধ। বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে না। যার কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। গত তিন বছরের পাট এখনো আমরা বিক্রি করতে পারিনি। গোডাউনে পড়ে আছে। আমরা ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর এই উপজেলায় প্রায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদন হয়েছে। আমরা আশা করছি প্রায় ৪ হাজার ৭৭০ বেল পাট আমরা পাব। যেসব ইউনিয়নে পানির সংকটের কারণে কৃষকরা পাট জাগ দিতে পারছেন না তাদের আমাদের কয়েকটা বিল আছে সেখানে পাট জাগ দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি।
মন্তব্য করুন