শরীয়তপুরের নড়িয়াতে অন্তত ১০টি পরিবারের কাছ থেকে চাঁদা দাবি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে রনি মাঝি নামের এক সাবেক যুবদল নেতার বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, শেখ হাসিনা সরকার বিদায়ের পর এমন ঘটনা ঘটেছে। রনির ভয়ে অনেকেই বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। যদিও যুবদল নেতা চাঁদা দারির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ঘড়িসার ইউনিয়নের বাহের কুশিয়া মৌজার সাড়ে ৮ একর সম্পত্তির মালিক অলোক কুণ্ডু ও পরিবার। পরে জায়গাটি জোর করে দখলে নেয় স্থানীয় বিএনপি নেতা হায়দার মাঝি। আদালতের মাধ্যমে সেই সম্পত্তি আলোক কুণ্ডু ও তার পরিবার বুঝে পাওয়ার পর নাজির খান নামের এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা দেন। বর্তমানে নাজির খান সেই সম্পত্তি প্লট আকারে বিক্রি করলে কিনে নেয় অন্তত ৪০টি পরিবার। আর এদের মধ্যে ১০টি পরিবার বাড়ি তৈরি করে বসবাস করছেন।
এদিকে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর হায়দার মাঝির ছেলে ও সাবেক উপজেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রনি মাঝি বাড়িগুলোতে গিয়ে বাসিন্দাদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করছেন।
জায়গার মালিক নাজির খাঁন বলেন, আমি অলোক কুণ্ডু ও তার ভাইদের কাছ থেকে সম্পত্তিটি কিনে নেই। সেখানে হিন্দু ও মুসলিম ধর্মের বেশ কিছু পরিবার সম্পত্তি কিনে বসবাস করছেন। সম্প্রতি আওয়ামী লীগে সরকার পতনের পর রনি মাঝি সেখানের বাসিন্দাদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করছেন। অনেকেই ভয়ে চাঁদা দিচ্ছেন। তাছাড়া রনি মাঝি আর তার লোকজন সেখানে থাকা আমার অফিসটি জোর করে দখলে নিয়ে তালাবদ্ধ করে রেখেছেন।
মো. শাহজাহান নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, আমরা নাজির খানের কাছ থেকে দলিল দেখেই কিনেছি। আমাদের জমির মিউটেশন করাও হয়েছে। সরকার পতনের পর কিছু দুষ্কৃতিকারী ও রনি মাঝি আমাদের এখানে এসে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে চাঁদা দাবি, হুমকি দিচ্ছেন। বর্তমান সরকার ও প্রশাসন যেন বিষয়টি একটু দেখেন।
আব্দুর রশিদ সরদার নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, আমি এখানে আমার দুই সন্তানের জন্য দুইটি প্লট কিনেছি। এখন রনি মাঝি এসে আমাদের কাছ থেকে চাঁদা চায়। তারা একটি ঘর ভেঙেও নিয়ে গেছে। আমরা ভীষণ আতঙ্কে আছি। আমরা সুন্দরভাবে বাঁচতে চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রনি মাঝি বলেন, ওইটা আমার বাড়ি, এটা সবাই জানে। আর আমি চাঁদা দাবি করিনি। যারা অভিযোগ করেছে তাদের আমার কাছে নিয়ে আসেন। এ সময় তিনি রাগান্বিত হয়ে মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
দলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদা দাবি করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ঘড়িসার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আজিজুর রহমান হরমুজ মুন্সি। তিনি বলেন, তারেক রহমানের আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন কেউ যাতে দলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করতে না পারে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো এবং সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম। তিনি কালবেলাকে বলেন, কোনো ব্যক্তির চাঁদাবাজির করার সুযোগ নেই। আমরা এই ব্যাপারে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। এমন কিছু পেলে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন