সাতক্ষীরা পুলিশ লাইন্সে ১১ দফা দাবিতে পুলিশ সদস্যদের কর্মবিরতি ও শোক র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় পুলিশ সদস্যরা তাদের অফিসারদের বিভিন্ন অন্যায়ের কথা তুলে ধরে শাস্তি দাবি করেন।
তারা বলেন, আমরা জনতার পুলিশ হতে চাই। আমরা কোনো রাজনৈতিক নেতা বা কারও পেটোয়া বাহিনী হিসেবে কাজ করতে চাই না। আপনারা যারা পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় বা পুলিশের ওপর আক্রমণ করতেছেন, তাদের কাছে আমাদের অনুরোধ, আমাদের এভাবে আর আক্রমণ করবেন না। আমরা আপনাদেরই সন্তান-ভাই।
শুক্রবার (৯ আগস্ট) বিকেলে সাতক্ষীরা পুলিশ লাইন্সে সমন্বয় কমিটির দেওয়া ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ এসব কথা বলেন পুলিশ সদস্যরা। তবে কবে নাগাদ তারা কাজে যোগ দেবেন সে বিষয়টি এখনো ‘অজানা’।
বিক্ষোভ ও কর্মবিরতির এই কর্মসূচিতে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা পুলিশ অফিসারদের বিভিন্ন অন্যায়ের কথা তুলে ধরে তাদের শাস্তি দাবি করেন। একই সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে বলেন, আমরা কারো শত্রু বা প্রতিপক্ষ না। আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দায়িত্ব পালন করি। মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে লাঞ্ছিত হই।
তারা আরও বলেন, আমরা রাস্তায় বের হতে পারি না। আমাদের সহকর্মীদের বিভিন্নভাবে হত্যা করা হচ্ছে। তাদের লাশ ঝুলিয়ে রাখাসহ পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছি। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলছে, চলবে।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-
০১.ক) স্বাধীন কমিশন গঠন, পুলিশ বাহিনীকে সংস্কার করে দলীয় প্রভাব মুক্ত জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত করতে হবে। আমরা যে রংয়ের ইউনিফর্ম পরিধান করে কলঙ্কিত হলাম সেই পোষাকের রং পরিবর্তন করে কনস্টবল থেকে আইজি পর্যন্ত একই ড্রেসকোড হতে হবে।
খ) আমাদের সব পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং এর সঙ্গে সঙ্গে যেসব সিনিয়ার অফিসাররা ক্ষমতা লোভী দালাল পুলিশ অফিসারদের কারণে আমাদের শতশত পুলিশ সদস্য ও সাধারণ ছাত্র জনতা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের গ্রেপ্তার করে অনতিবিলম্বে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে বিচার করতে হবে ও তাদের অবৈধ সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশের কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে।
০২.ক) চলমান সহিংসতায় যেসব পুলিশ সদস্য আহত ও নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে, যারা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জানমালের নিরাপত্তার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকারের বিভাগীয় ব্যবস্থা অথবা হয়রানি করা যাবে না।
খ) সব পুলিশ সদস্যদের অন্যান্য সংস্থার চাকরির মতো শ্রম আইন অনুযায়ী ০৮ (আট) ঘণ্টা কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে যদি ০৮ (আট) ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব পালন করতে হয় তাহলে ওভার টাইম হিসাবে গণ্য করতে হবে।
০৩. ইন্সপেক্টর থেকে ৬০ শতাংশ এবং ৪০ শতাংশ এএসপি পদে সরাসরি নিয়োগ দিতে হবে। পদোন্নতির জটিলতা নিরসনের জন্য সকল পদে পদোন্নতির জন্য সুপার নিউমারারি চালু করতে হবে এবং নুন্যতম পুলিশ সুপার পর্যন্ত পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে। অধস্থন পুলিশ সদস্যদের টিএ/ডিএ বিল যথা সময়ে প্রদান করতে হবে ও সোর্সমানি প্রদান করতে হবে। ঝুকি ভাতা বেসিকের ৭০ শতাংশ দিতে হবে এবং ফ্রেশমানি পুলিশ সদস্যের ব্যাংক হিসাবে দিতে হবে।
০৪. আমাদের সব পুলিশ সদস্য ও পরিবারের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে এবং তার পাশাপাশি ব্যক্তিগত চিকিৎসা করা হলে তার ভাউচার অনুসারে কল্যাণ তহবিল থেকে সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
০৫. ক) বিভাগীয় পদোন্নতির ক্ষেত্রে একবার পরিক্ষায় পাশ করার পরে পর্যায়ক্রমে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা এবং অধস্থনদের পদোন্নতির বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনে সুপার নিউমারারী পদ সৃষ্টি করতে হবে।
খ) ওসি হিসাবে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বিগত ১৫ (পনের) বছরে যারা সুবিধা বঞ্চিত হয়েছেন তাদের দায়িত্ব দিতে হবে এবং ওসি হিসাবে ০২ (দুই) বারের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না এবং ৫৪ (চুয়ান্ন) বছরের বয়সের সীমাবদ্ধতা তুলে দিতে হবে।
০৬. অধস্থন পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে পিআরবি অনুসারে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করতে হবে, এবং ব্যক্তিগত কাজে কোনো সদস্যকে ব্যবহার করা যাবে না ও কন্সটেবল থেকে সব পর্যায়ের অফিসারদের পোস্টিং বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে।
০৭. সার্জেন্ট এবং সাব-ইন্সপেক্টরদের পিএসসির অধীনে একই নিয়োগের মাধ্যমে সব ইউনিটে পদায়ন করতে হবে এবং বর্তমানে কর্মরত সার্জেন্টদের তদন্ত ক্ষমতা দিতে হবে ও এটিএসআইকে এএসআই (নিরস্ত্র) হিসাবে সমন্বয় করতে হবে। জনগণের স্বার্থে এবং সুষ্টু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ট্রাফিক বিভাগের অবৈধ রেকার বাণিজ্য বন্ধ করা এবং মামলার টার্গেট প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে।
০৮. কমিউনিটি ব্যাংক এবং সবকল্যাণ তহবিলের সু-স্পষ্ট হিসাব প্রতিবছর সবাইকে প্রদান করতে হবে এবং লোনের ক্ষেত্রে সুদের হার ৬ শতাংশের নিচেই নিয়েই আসতে হবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে সমন্বয় করতে হবে।
০৯. ক) নবম গ্রেড থেকে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়ে ৬ষ্ঠ গ্রেড নিশ্চিত করতে হবে এবং একই পদে সর্বোচ্চ ০৬ (ছয়) বছরের মধ্যে পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে।
খ). ইন্সপেক্টর থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চাকরি হারালে সবাইকে পেনশনসহ সব ধরণের সুযোগ সুবিধা পায় কিন্তু কনস্টবল থেকে এসআই পর্যন্ত এই সুবিধা দিতে হবে এবং সারা বাংলাদেশে যেসব সদস্যদের বরখাস্ত করে রাখা হয়েছে তাদের মানবিক কারণে বিবেচনা করতে হবে।
১০. ক) প্রত্যেক পুলিশ সদস্যকে প্রতি বছর ২০ (বিশ) দিন অর্জিত ছুটি বাধ্যতামূলক ভোগ করার ব্যবস্থা করতে হবে। নৈমিত্তিক ছুটির পাশাপাশি ০২ (দুই) মাস।
খ). প্রত্যেক পুলিশ সদস্য নিজ রেঞ্জে পর্যায়ক্রমে পদায়নের ব্যবস্থা করতে হবে এবং অধস্থন পুলিশ সদস্যদের ১০০ শতাংশ আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
১১. পুলিশের সব সদস্য সব ইউনিটে চাকরি করার সুযোগ রাখতে হবে (স্বায়ত্বশাসিত এবং টেকনিক্যাল) বলে কোনো ইউনিট থাকবে না ও সবাইকে সব ইউনিটে বদলির সুযোগ থাকতে হবে। পুলিশ সুপারের নিচে বডিগার্ড, অর্ডালি নিয়ম বন্ধ করতে হবে।
আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশ করতে না করলে সমগ্র বাংলাদেশে পুলিশের কর্মবিরতি চলমান থাকবে বলে জানান বিক্ষোভকারী পুলিশ সদস্যরা।
মন্তব্য করুন