রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) শামীম আহমেদ বলেছেন, শিক্ষার্থীরা যে কাজগুলো করছেন সবগুলোই ইতিবাচক। রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য শিক্ষার্থীদের সব ইতিবাচক দাবির সঙ্গে আমরা একমত পোষণ করছি। আপনারা যেভাবে কাজ করছেন আমরা আশাবাদী এ দেশ পরিবর্তন হবে।
শনিবার (১০ আগস্ট) দুপুরে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শামীম আহমেদ বলেন, আমাদের পুলিশ কিংবা প্রশাসনেরও যদি কারও হাত রক্তে রঞ্জিত থাকে তাহলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক হিসেবে আমার যে ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন সেই ব্যবস্থা আমি দ্বিধাহীন চিত্তে অবশ্যই অবশ্যই নেব।
তিনি বলেন, আমরা যারা কাজ করছি কেউই দায়ের বাইরে নই। সবারই দায় রয়েছে। তবে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আমাদের বিকেকের কাছে পরিষ্কার থাকতে হবে। অন্য ১০ জন কর্মচারীর মতো আমার দায় হচ্ছে, এই দেশকে ভালো রাখা।
এখন যারা কাজ করছে, আমি দ্বিধাহীন চিত্তে বলতে পারি এদের কেউ কেউ অতিউৎসাহী আছেন। তবে আমাদের অনেক সরকারি কর্মচারী আছেন যারা সত্যিকার অর্থে দেশটাকে ভালোবাসেন। তারা যাতে ভিকটিমাইজ না হন সেই বিষয়টি আমাদের দেখতে হবে। কিন্তু অতি উৎসাহীদের ব্যাপারে আমাদের সবসময় সতর্ক থাকতে হবে, যেন তারা অতি উৎসাহ দেখিয়ে আবার কটাক্ষ করতে না পারে।
ডিসি শামীম আহমেদ বলেন, আমার ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। আমি নিজেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। ঢাবির ইংরেজি বিভাগের ছাত্ররা একই টি-শার্ট পড়ে এই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করছে।
আপনার যেভাবে বলছেন, আমাকে প্রতিনিয়ত ৩-৪ বার বাসায় এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। কারণ, আমি ডিসি হিসেবে এখানে কাজ করি। আবার বাড়ি থেকে বলছে, বাবা এটি কেন হচ্ছে, ওটা কেন হচ্ছে ইত্যাদি। সুতরাং আমি আপনাদের মনের বাসনা আমি উপলব্ধি করি এবং জানি।
ডিসি বলেন, আপনারা কাজ করছেন, সব কাজ ইতিবাচক। রাষ্ট্রের সংস্কারের জন্য যে কাজগুলো হবে তা আমরা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ছাত্রদের নিয়ে এক সঙ্গে করবো। আর যারা দায়ি আছেন তাদের বের করে দেয়ার দায়িত্ব আমাদের, আমরা চিহ্নিত করে দেব। কিন্তু আমাদের দাবি থাকবে, সত্যিকার অর্থে যারা ভালো কাজ করছে তারা যেন তাদের স্থানটাকে আরো আলোকিত করতে পারে।
আমি খোলামেলাভাবেই বলছি, অতি উৎসাহী যারা এখন হাত-তালি দিয়ে মিলে যাচ্ছে তাদের ব্যাপারে আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে। হঠাৎ করে অনেক লোক নেমে গিয়েছে। এটি আমাদের মধ্যেও আছে। কয়েকদিন আগে আমার পাশে বসে যে লোক উল্টাপাল্টা কথা বলেছেন সে এখন ফেসবুকে পোস্ট করে বলছেন ‘বিজয়ের হাসি হাসলাম’।
শামীম আহমেদ বলেন, এখন বিজয়ীদের সঙ্গে হাততালি দেয়ার লোকের অভাব নেই। রাজশাহীতে পেট্রোল পাম্পে অনেকেই জ্বালানি তেল নিয়েছে। কেউ কেউ নাকি বলার চেষ্টা করেছে যে, ক্ষমতায় এসে গেছি, তেল নিয়ে টাকা দিবো কেন। সেক্ষেত্রে আমাদের সবার অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে যে, কারা বিনামূল্যে তেল নেয়ার চেষ্টা করছে।
সেই বিষয়গুলো আপনাদের সঙ্গে নিয়ে আমরা শক্তভাবে দেখতে চাই। কারণ, পরিবর্তনের অর্থ এই নয় যে, তারা এমন অরাজকতা করবে। আর যারা এমন করছে তারা কিন্তু গুটি কয়েক মানুষ। এই পুরো ব্যবস্থাটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য তারা নানা অসঙ্গতি করবে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা ইতোমধ্যেই থানায় যাওয়া শুরু করেছে। আপনারা যেটি বলেছেন, পুলিশ বাহিনীর মধ্যে যাদেরকে নিয়ে বিতর্ক আছে তাদেরকে বাদ দিয়ে এবং যাদের নিয়ে বিতর্ক নেই তাদের নিয়ে আমাদের নতুন যাত্রা শুরু হবে।
মতবিনিময় সভায় সেনাবাহিনীর সিও মোহাম্মদ শামীম, জেলা পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া মোহাম্মদ মেশকাত চৌধুরী, মেহেদী সজিব, ফাহিম রেজাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলেনর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন