কারও হাতে লাঠি, কেউ মাথায় বেঁধেছেন লাল পট্টি। কেউ মুসলিম, কেউ হিন্দু। এই দলে সরব এলাকার তরুণরাসহ নানা বয়সী মানুষ। দিন রাত পালা করে দলবল নিয়ে তারা বসছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন মসজিদ, মাজার, মন্দিরের সামনে। উদ্দেশ্য এসব ধর্মীয় উপসনালয়ে দুর্বৃত্তদের হামলা, লুটপাট-হামলা ঠেকানো। মূলত চট্টগ্রাম নগরীতে একটি মন্দিরে দুর্বৃত্তদের হামলাচেষ্টার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে গত তিন দিন ধরে এমনটাই চিত্র চট্টগ্রামের বিভিন্ন মন্দিরে। যদিও এরই মধ্যে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় মাজার ও মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর থেকেই চট্টগ্রামের মাজার, মসজিদ, মন্দির ঘিরেই যেন গড়ে উঠেছে সম্প্রীতির অন্যন্য নিদর্শন।
জানা গেছে, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার ঘটনা ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় ধর্মীয় উপাসনালয়েও হামলা হয়। চট্টগ্রামের রাউজান, ফটিকছড়ি, লালদিঘিপাড়, সীতাকুণ্ড, রাঙ্গুনিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার মন্দির, মসজিদ এবং ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে।
মূলত এরপর থেকেই বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়, মন্দির ও গির্জা রক্ষায় সোমবার (৫ আগস্ট) সন্ধ্যা থেকে পাহারা বসিয়েছে শিক্ষার্থীরা। টহল জোরদার করে সেনাবাহিনী। শিক্ষার্থীদের দেখাদেখি মন্দির পাহারায় এগিয়ে এসেছেন সাধারণ মানুষজন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা।
কেন্দ্রীয় বিএনপির (চট্টগ্রাম বিভাগ) সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর হেলাল কালবেলাকে বলেন, চট্টগ্রামের বিভিন্ন মন্দিরে হামলাচেষ্টার খবর পেয়েছি। দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামের প্রতিটি মন্দিরে যেন পাহারা বসানো হয়। টানা তিন দিন তারা এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন মন্দির পাহারা দিচ্ছে।
এ ছাড়াও চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি স্থানে সংখ্যালঘুদের উপসানালয় রক্ষায় অনেকেই এগিয়ে আসেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও এ নিয়ে সোচ্চার দেখা গেছে সবাইকে।
চট্টগ্রামের মন্দির গির্জাসহ সব উপসনালয়ে নিরাপত্তা জোরদারের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরের আমির শাহজাহান চৌধুরী বলেন, যারা এসব ঘটনায় জড়িত তাদের চিহ্নিত করে বিচার করতে। একটি সুবিধাবাদী দুর্বৃত্তগোষ্ঠী বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা, প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা করেছে, সেটা কারা করেছে তা পুলিশ প্রশাসন জানে। প্রতিটি থানায় শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রতিটি থানায় কমিটি গঠিত হয়েছে। আমাদের সঙ্গে ১৮ বছর পরে প্রশাসনের বৈঠক হয়েছে। আমরা সেখানে কথা বলেছি। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ, ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ভুল প্রমাণ করার জন্য পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। চট্টগ্রামে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়, মন্দির ও গির্জায় যাতে কোনো ধরনের হামলা না হয় এজন্য আমরা প্রতিটি জেলা-উপজেলায় কমিটি করে সোমবার সন্ধ্যা থেকে পাহারার ব্যবস্থা করেছি। পাশাপাশি চট্টগ্রামের প্রত্যেক সমন্বয়ককে উপাসনালয়সহ সরকারি স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাঠে থাকার নির্দেশনা দিয়েছি।
মন্তব্য করুন