সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি পালনকালে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৩ সাংবাদিকসহ ৫ শতাধিক। এ ছাড়া মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুদর্শন সেন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রোববার (৪ আগস্ট) সকাল থেকেই নগরীর চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, বারুতখানা, সোবহানীঘাট, নয়াসড়ক, উপশহর, মদিনামার্কেট, টিলাগড়সহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ, অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও আন্দোলনকারীরা জড়ো হন। এ সময় উভয়পক্ষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে কঠোর অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পুলিশ জানায়, আন্দোলনকারীরা নির্বাচন অফিসে অগ্নিসংযোগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবনে ভাঙচুর-আগুন, সংসদ সদস্য হাবিবের অফিসে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, সোবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করে। সিলেটের গোলাপঞ্জে থানায় ঢুকে হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় ওসিসহ ৪ পুলিশ সদস্য আহত হন।
এ ছাড়া সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সরকারি দুটি গাড়িতে আগুন ও উপজেলা কমপ্লেক্স ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।
নগর ঘুরে দেখা যায়, কিনবিজ্রের দক্ষিণ পাশে ভার্থখলা এলাকায় আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ করে রাখে। পুলিশ দেখামাত্র তারা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। বারবার ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলেও ফের বিক্ষোভ করে তারা। এ সময় সিলেট জেলা নির্বাচন অফিসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। নগরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পার্শ্ববর্তী দোকানপাট ও মার্কেট বন্ধ হয়ে যায়। মুহূর্তেই ফাঁকা হয়ে যায় রাস্তাঘাট।
এ ছাড়া সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবের অফিসে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রোববার বেলা দুটার দিকে মহানগরীর চন্ডিপুলস্থ অফিসে এ হামলার হয়। পরে অফিসের সামনে থাকা ১০-১২টি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। এ সময় অফিসের গ্লাস, চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, আমার অফিস বন্ধ ছিল। দুর্বৃত্তরা অফিসের সামনে হামলা চালিয়েছে।
বিকেল ৫টার দিকে সোবহানীঘাট এলাকায় পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়লে নাইওরপুল পয়েন্টে এসে রাস্তায় ট্রায়ারে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করে আন্দোলনকারীরা।
সিলেট জেলা যুবদলের সাবেক সদস্য লিটন আহমদ কালবেলাকে বলেন, আমাদের দুই শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে অনেকেই গুলিবিদ্ধ। সাউন্ড গ্রেনেডে তিনি নিজেও গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি কাইয়ুম চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, আমরা শুরু থেকেই আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে আসছিলাম। রোববার আমরা সরাসরি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে অবস্থান করি। এ সময় আমাদের ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হয়।
তিনি বলেন, আমাদের ট্যাক্সের টাকায় গুলি কিনে পুলিশ আমাদের সন্তানদের বুকে গুলি চালায়। আমরা এই ফ্যাসিবাদ সরকারের পতন চাই। আমাদের ছাত্রদের দাবি মেনে নিতে এবং আমরা সরকারের পদত্যাগ দাবি করছি।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার অতিরিক্ত ডিআইজি আজবাহার আলী শেখ কালবেলাকে বলেন, আন্দোলনকারীরা পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালালে পাঁচজন পুলিশ গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানান।
সিলেটে জেলার পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান কালবেলাকে বলেন, গোলাপগঞ্জ থানায় ঢুকে দুর্বৃত্তরা হামলা করে ওসিসহ চার পুলিশ সদস্যকে আহত করেছে। আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় আছি।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. জাকির হোসেন কালবেলাকে বলেন, মানুষের জানমাল রক্ষায় পুলিশ সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।
মন্তব্য করুন