এখনো চলছে বর্ষাকাল। মৎস্য ভান্ডার নামে খ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া উপজেলায় নতুন বানের পানিতে ঝাঁক বেঁধে বিচরণ করছে অসংখ্য দেশি প্রজাতির মাছের পোনা। চলনবিলে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মাছ ধরা নিষেধ থাকলেও একশ্রেণির মানুষ তা মানছেন না।
নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জালে নিধন করছে নানা রকম দেশি প্রজাতি মাছের পোনা। এতে ধ্বংস হচ্ছে মৎস্যসম্পদ ও জলজপ্রাণী। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। এসব বন্ধের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল। তবে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বন্যার পানি থাকলে মাছের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে উপজেলা মৎস্য বিভাগ।
উপজেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, সাধারণত শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি সময়ে এ বিলে দেশি প্রজাতি মাছের প্রজননকাল। আষাঢ় মাসের শুরুতে এ বছর বিলে পানি আসায় এবং পানি বেশি থাকায় পোনা মাছের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি দেখা গেছে। দেশের বৃহত্তম মিঠাপানি মাছের প্রধান উৎস চলনবিলে এখনো প্রায় ৪৪ প্রজাতি দেশি মাছ পাওয়া যায়, যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়।
প্রতিবছর এ উপজেলা থেকে প্রায় ২১ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন করা হয়। এর মধ্যে শুধু উন্মুক্ত জলাশয় থেকে বর্ষাকালসহ বছরে মাছ আহরণ করা হয় প্রায় সাড়ে ৮ হাজার টন। বাকি মাছ পুকুর ও অন্যান্য জলাশয়ে চাষ করা হয়। উন্মুক্ত জলাশয় থেকে উৎপাদিত শুঁটকি মাছ ও চাষ করা সাদা পাবদা মাছ পাশের ভারতে রপ্তানি করা হয়, যা বৈদেশিক আয়ের একটি উৎস এ চলনবিল।
স্থানীয়রা জানান, মৎস্য প্রজননের সময়ে মাছ ধরা নিষেধ থাকলেও মানছেন না কেউ। এসব পোনা মাছ ধরার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে কিছু অসাধু জেলে। বানা, কারেন্ট জাল, চায়না জালসহ বিভিন্ন ফাঁদ পেতে অবাধে নিধন করছে মা ও পোনা মাছ। মাছ শিকারের এসব ফাঁদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হলো চায়না দুয়ারি জাল। মাছের পাশাপাশি চায়না দুয়ারি জালের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না কাঁকড়া, ব্যাঙ, কুইচা, সাপসহ অধিকাংশ জলজপ্রাণী।
চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পৌর এলাকার উত্তর দমদমা, দক্ষিণ দমদমা, ফলিয়া, হিয়ালা, কয়া, চৌগ্রাম, ডাহিয়া, কলম, তাজপুর ও শেরকোল ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় চায়না দুয়াররিসহ অবৈধ ফাঁদ পেতে পোনামাছ নিধনের উৎসব চলছে। এসব মাছ জেলেরা প্রকাশ্যে বিক্রয় করছেন স্থানীয় বাজারে।
উপজেলার ডাহিয়া বাজারের কৃষক আলহাজ বলেন, প্রতিদিন সকালে মাছের বাজারে চায়না দুয়ারি জালে আটকা পড়া টাকি, শোল, কই, বোয়াল, ভেদা, শিং, মাগুরসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছের পোনা বিক্রয় করছেন এক শ্রেণির অসাধু জেলেরা। উৎসুক হয়ে এসব মাছ কিনছেন কেউ কেউ। এসব বন্ধে প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই।
চলনবিল পরিবেশ ও প্রকৃতি আন্দোলনের সভাপতি মো. এমরান আলী রানা বলেন, চলনবিল রক্ষায় আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি সামাজিকভাবে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া মাছ শিকারের সবধরনের অবৈধ ফাঁদ বন্ধ করতে পারলে পোনা মাছ নিধন ও অন্যান্য জলজপ্রাণী রক্ষা করা সম্ভব।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহাদত হোসেন কালবেলাকে বলেন, স্থানীয় বাজারগুলোতে ৮টি অভিযান ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। এতে ৭৫০ মিটার চায়না দুয়ারি ও প্রায় দেড় লাখ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে পোড়ানো হয়েছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৫ লাখ টাকা।
তিনি বলেন, আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় মাছের বাজারগুলোতে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিলে বন্যার পানি থাকলে মাছের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আমরা আশা করছি।
মন্তব্য করুন