জোয়ারের ঢেউয়ের তীব্র আঘাতে কক্সবাজার সৈকত রক্ষার ৬৮ লাখ টাকার জিও ব্যাগের বাঁধ তলিয়ে গেছে পানির নিচে। জোয়ারের পানির তোড়ে কক্সবাজার সৈকতের লাবনী, শৈবাল এবং মাদ্রাসা পয়েন্টসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের ফলে এ বাঁধ নষ্ট হয়ে গেছে।
গত এক সপ্তাহের ভাঙনে তলিয়ে গেছে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি ঝাউগাছ। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে আরও বড় ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, সৈকত রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নিচ্ছে তারা। স্থানীয়রা বলছেন, জরুরি ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে সরকারি টাকা লুটপাট না করে সৈকত রক্ষায় স্থায়ী সমাধান করা জরুরি।
বুধবার (৩১ জুলাই) সৈকতের লাবণী থেকে মাদ্রাসা পয়েন্ট পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, জোয়ারে ঢেউয়ের আঘাতে একের পর এক ঝাউগাছ উপড়ে পড়ছে। ভেঙে গেছে শৈবাল পয়েন্টের রাস্তাটি। উপড়ে পড়া ঝাউগাছের আঘাতে ছিঁড়ে গেছে বৈদ্যুতিক তারও। ঝুঁকিতে পড়েছে শৈবাল পয়েন্টে কয়েকটি স্থাপনা আর লাবনী পয়েন্টে ট্যুরিস্ট পুলিশের টাওয়ার।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, ২০২২ সালে জরুরি ভিত্তিতে লাবনী থেকে শৈবাল পয়েন্ট পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সৈকতের মধ্যবর্তী ৬০০ মিটার স্থানে ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। আর সেই ৬৮ লাখ টাকার বাঁধ এবার পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সদর রেঞ্জের কর্মকর্তা সমির রঞ্জন সাহা বলেন, বৈরী আবহাওয়ায় উত্তাল সাগরের ঢেউ এর আঘাতে পাঁচ হাজারের বেশি ছোটবড় ঝাউগাছ উপড়ে গেছে। বনায়নের পাশাপাশি কক্সবাজার সৈকত ও শহর রক্ষায় স্থায়ী সমাধানের পথ বের করতে হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারের সভাপতি এইচ এম এরশাদ বলেন, যে স্থানে জিও ব্যাগ বসানো হয় সে স্থানের সৈকত থেকে বালি উত্তোলন করে ব্যাগে ব্যবহারের ফলে দ্রুত সময়ে বাঁধ নষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় জোয়ারের পানি আসলেই এ বাঁধ মাটির নিচে দেবে যায়। যদি ভিন্ন স্থান থেকে বালি সংগ্রহ করে বাঁধ নির্মাণ করা হতো তাহলে ভয়াবহ অবস্থা দেখতে হতো না। মনে রাখতে হবে প্রতিবছর সৈকতের চরিত্র পাল্টে যায়। তাই পরিকল্পিতভাবে সৈকত রক্ষার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিচের কর্মী মাহবুব বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে সাগরের জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি উচ্চতায় বেড়ে যাচ্ছে। এ সময়ে বিপুল পরিমাণ ঝাউবাগান ধ্বংসের দৃশ্য দেখছি। অনেক স্থাপনা এখন ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, ২০২২ সালে জরুরি প্রকল্পের আওতায় ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগের বাঁধ দিয়ে প্রটেকশন দেওয়া হয়েছিল। এখন যেহেতু আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে সেহেতু জরুরি ভিত্তিতে আবারো হয়তো টিউব দিয়ে সৈকত রক্ষার চেষ্টা করা হবে। তবে সৈকতরক্ষায় স্থায়ী সমাধানের জন্য ৬০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি পাস হলেই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি মো. শাহিন ইমরান কালবেলা বলেন, এখন যেহেতু সৈকতের ভাঙন দেখা দিয়েছে তাই সৈকত রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি পদক্ষেপ নিচ্ছে। স্থায়ী সমাধানের জন্যও পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন