কোটা আন্দোলনের সহিংসতায় প্রাণ হারানো কিশোরগঞ্জ তাড়াইলের যুবক তরীকুল ইসলাম রুবেলের (২৩) স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি ফেরা হলো না। একটি গুলিতেই রুবেলের স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছে।
গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাত ৮টায় রাজধানীর মিরপুর ১৩ নম্বর জিরো পয়েন্টের সামনে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন রুবেল। একটি গুলি কপাল ভেদ করে মাথার খুলিসহ উড়ে যায়।
জানা যায়, উপজেলার হাছলা পাথারিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক ফরিদ উদ্দিনের ৪ ছেলে ২ মেয়ের মধ্যে ৫ নম্বর সন্তান রুবেল। গ্রামের বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। বাবা কৃষিকাজ করেন। পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য ৭ বছর আগে এলাকা ছেড়ে পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকায়। নিজের একান্ত চেষ্টায় বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে বছর তিনেক আগে চাকরি নেন মিরপুর ১৩ মন্দির গেইট এলাকার রাকিন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির রাকিন সিটিতে। দায়িত্ব পান ইস্টিবি অপারেটরের।
কোটা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন না রুবেল। ঘটনার দিন অফিসের কাজ সেরে রাত ৮টায় বের হয়ে ৫৬৯ সেনপাড়া পর্বতা, মিরপুর-১৪ তে নিজ বাসস্থানে যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হয় রুবেল।
রুবেলের গ্রামের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, পুরো পরিবারসহ আশপাশে শোকের মাতম। এলাকায় রুবেল খুব জনপ্রিয় ছিল। প্রতি ঈদে এলাকায় গিয়ে গরিব দুঃখীদের খোঁজখবর নিতেন। সাধ্যমতো সহযোগিতার সুনাম আছে রুবেলের।
রুবেলের বাবা ফরিদ উদ্দিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে কালবেলাকে বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেছে। রুবেলের স্বপ্ন ছিল বাড়িতে একটি পাকাঘর তৈরি করবে। মৃত্যুর আগের দিন আমাকে ফোনে বলেছে কয়েকদিনের মধ্যেই বাড়ি আসবে। আমার ছেলে তো লেখাপড়া করে না, কোনো রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত না। কেন তাকে এভাবে মেরে ফেলা হলো। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।
রুবেলের ভাই জুয়েল এই প্রতিবেদককে রুবেলের মোবাইলের ছবিগুলো দেখিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। দেশের জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে আছে রুবেলের অসংখ্য সেলফি। শরীফুল, মোস্তাফিজ, মেহেদী মিরাজ, সাইফুদ্দিন, নাজমুল হোসেন শান্তসহ প্রায় সকল ক্রিকেটারের সঙ্গে আছে রুবেলের সেলফি। রুবেলের দাফনের পর তাড়াইল থানা থেকে ফোন করে তথ্য নিয়েছে। তাছাড়া এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কেউ খোঁজ নেয়নি।
মন্তব্য করুন