বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন সড়ক পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলেও জানা গেছে।
বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারীরা নগরীর শিববাড়ি, রয়্যাল মোড়, সাতরাস্তা মোড়, ময়লাপোতা মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন।
অবরোধের শুরুতে নগরীর ময়লাপোতা মোহন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। পরে শিক্ষার্থীরা রয়্যাল মোড় এলাকায় এলে পুলিশ তাদের চারদিক থেকে ঘিরে রাখে।
অন্যদিকে আন্দোলনের মুখে সাতরাস্তার মোড়ে থাকা পুলিশের দুটি গাড়ি পিছু হটলেও দুপুর সোয়া ২টার দিকে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় পুলিশ কাঁদানেগ্যাস নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছাত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে নগরীর শান্তিধাম মোড়, রয়্যাল মোড়, সাতরাস্তা মোড়, ফুল মার্কেট এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ।
পুলিশ ভ্যানে আটক হওয়া ফাতেমা তুজ জোহরা নামে এক ছাত্রী বলেন, আমাদের অহেতুক পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বসে বিক্ষোভ করছিলাম। আমাদের অপরাধ কী। ভ্যানে আমিসহ ৯-১০ জন রয়েছি। এর মধ্যে চারজন মেয়ে। আমাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে, আমি জানি না আমাদের কী করবে পুলিশ। আপনারা আমাদের সহযোগিতা করুন।
খুলনা সদর থানার ওসি মো. কামাল হোসেন বলেন, গতকালই আমাদের ঘোষণা দেওয়া ছিল আর কোনো ছাত্রকে আন্দোলন করতে দেওয়া হবে না। তারা আইন নিজেদের হাতে নিয়েছে। আমাদের ওপর হামলা করেছে। পুলিশ বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) তাজুল ইসলাম বলেন, সোনাডাঙ্গা থানায় ২০ শিক্ষার্থী ও সদর থানায় ৬০ জনের মতো শিক্ষার্থী আটক রয়েছে। আটকদের যাচাই-বাছাই চলছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাত ১০টায় খুলনা সার্কিট হাউসে ১১ জন ছাত্র ও অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক করেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, মেয়র, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতারা। বৈঠকের পর তাৎক্ষণিক প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
এ সময় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সমন্বয়ক তানভীর আহমেদ বলেন, ‘আমরা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেছি। তবে খুলনায় আমরা কোনো সহিংসতা করিনি। এখন আন্দোলন ভিন্ন খাতের দিকে চলে যেতে পারে, তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা জানিয়ে দিচ্ছি আমাদের পরবর্তী সময়ে আর কোনো কর্মসূচি নেই।
তবে রাতেই শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ, প্রত্যাহারের ঘোষণা প্রত্যাখান করেন। অনলাইনে বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে মঙ্গলবার রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, খুলনার গ্রুপে এ তথ্য জানানো হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মিরাজ অন্য সব সমন্বয়ক এবং সহ-সমন্বয়কদের পক্ষে এ ঘোষণা দেন।
পরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্যাডে ‘স্পষ্ট বিবৃতি’ শিরোনামে আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে ফেসবুক গ্রুপ ‘কেইউ ইনসাইডার’ এবং ‘থট বিহাইন্ড দ্য কেইউ’ প্রকাশ করা হয়। এতদিন এই দুটি গ্রুপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি ঘোষণা এবং প্রকাশ করতেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, চলমান আন্দোলনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট কোনো সমন্বয়ক ছিলেন না। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীকে দিয়ে জোরপূর্বক যে প্রেস ব্রিফিং করানো হয়েছে তা নোংরা রাজনীতির অংশ ছাড়া কিছুই নয়। এ অবস্থায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা এই বিবৃতি প্রত্যাখান করছি।
মন্তব্য করুন