কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার সড়কে ঘুরছে বিশালদেহী হাতি। হাতির পিঠে বাদশাহী কায়দায় বসে আছেন মাহুত। তার নিয়ন্ত্রণেই পরিচালিত হচ্ছে হাতিটি। হাতির শুঁড় এগিয়ে যাচ্ছে এক দোকানে থেকে আরেক দোকানে। এমনকী সড়কের যানবাহন চালক ও পথচারীদের দিকেও। টাকা ছাড়া ফিরছে না হাতির শুঁড়। ভয়ে সবাই হাতির শুঁড়ে গুজে দিচ্ছেন টাকা। সম্প্রতি উপজেলার সদর বাজারে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
মাহুতের নিয়ন্ত্রণে এই চাঁদাবাজির ফলে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের। হাতি দিয়ে এমন অভিনব চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন দোকানিসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। এতে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার সদর বাজারে বিশালদেহী হাতি দিয়ে টাকা তুলছেন হাতির পিঠে বসে থাকা মাহুত। মাহুত টাকার অঙ্কে সন্তুষ্ট না হলে ফিরে আসে না হাতির শুঁড়। দোকানির অবস্থান অনুযায়ী কমপক্ষে ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে চাঁদা। এই চাঁদাবাজির কবল থেকে বাদ পড়ছেন না গাড়িচালক ও পথচারীরাও।
মাহুত নিয়ন্ত্রিত হাতির সাহায্যে যানবাহনের গতি রোধ করে চাঁদাবাজি করছেন। এতে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। দূরদূরান্তের যাত্রীরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। হাতির শুঁড় যেদিক এগিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা পাওয়া ছাড়া ফেরত আসছে না। যার ফলে এই চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন দোকানিসহ গাড়িচালক ও পথচারীরা।
দেখা গেল, হাতি তার লম্বা শুঁড় এগিয়ে দিলেন এক মুদি দোকানির দিকে। দোকানিও হাতির শুঁড়ে গুঁজে দিলেন ২০ টাকা। তবু হাতি তার শুঁড় ফিরিয়ে আনছে না। দোকানি পরে ৫০ টাকা হাতির শুঁড়ে গুঁজে দিলে হাতি তার শুঁড় ফিরিয়ে আনে।
ওই দোকানির কাছে টাকা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে দোকানি বলেন, টাকা না দিলে হাতি সরবে না। এতে আমার ব্যবসার ক্ষতি হবে। এ ছাড়াও যদি টাকা না দিই হাতি দোকানের মালপত্র ফেলে দিতে পারে।
উপজেলা সদর বাজারের ফাহাদ ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড খেলাঘরের স্বত্বাধিকারী ওমর ফারুক বলেন, আমার দোকানের সামনে হাতি দাঁড় করিয়ে টাকা নিয়েছে। টাকা না দেওয়া পর্যন্ত হাতি দোকানের সামনে থেকে সরেনি।
ব্রাহ্মণপাড়া দক্ষিণ বাজারের রবি মেডিকেল হলের স্বত্বাধিকারী সফিউল্লাহ সেলিম বলেন, হাতির ওপর বসে এক লোক হাতি দিয়ে প্রতিটি দোকান থেকে টাকা তুলছে। আমার দোকানের সামনেও হাতি এসে দাঁড়ায়, টাকা দেওয়ার পর হাতিটি আমার দোকান ছেড়ে যায়।
এভাবে হাতির ভয় দেখিয়ে কেন চাঁদাবাজি করছেন? এ প্রশ্নের জবাবে মাহুত নুরুল ইসলাম এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমি গত ২০ বছর ধরে এভাবে হাতি দেখিয়ে হাতির ভরণপোষণের জন্য লোকজনের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছি। সবাই ইচ্ছে করেই টাকা দিচ্ছে। এখানে চাঁদাবাজির কী আছে? আমি তো কারও ওপর জোর করি না, যে যা দেয় তা নিয়েই চলে যাই।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আতিক উল্লাহ বলেন, হাতি দিয়ে টাকা তোলার বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স ম আজহারুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের চাঁদাবাজি প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। আমি এইমাত্র থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেছি। হাতি দিয়ে টাকা তোলা ব্যক্তিকে যেখানেই পাবে সেখানে যেন আটক করা হয়।