জামালপুরে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নবনির্মিত ইনভেস্টিগেশন কাম স্টোর ভবনে হস্তান্তরের আগেই দেখা দিয়েছে ফাটল। আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর করা না হলেও দ্বিতল এ ভবনে রোগীদের এক্সরে, ইকোকার্ডিওগ্রাম, এন্ডোস্কোপি, ইসিজি সেবা প্রদান করা হয়। ভবনের ভেতর ও বাইরের দেয়ালে দেখা দিয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় ফাটল। এসব ফাটল বেয়ে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি ভবনটির স্থায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে গণপূর্ত বিভাগকে চিঠি দিয়েছে বলে জানা গেছে। পুরাতন ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় চলতি বছরের ১৪ মে এই ভবনে রোগীদের সেবা কার্যক্রম পরিচালনা শুরু হয়।
এক বছর আগে নির্মাণকাজ শেষ হলেও গণপূর্ত বিভাগ ভবনটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে না দেওয়ায় সেটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। বর্তমানে নতুন এ দ্বিতল ভবনের ভেতর-বাইরে প্রায় সর্বত্রই অনেক ফাটল দেখা দিয়েছে। পলেস্তারা খসে পড়েছে দোতলার একাধিক কক্ষে, এ ছাড়া অনেক জায়াগায় পলেস্তারা খসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। কোথাও বেশ বড় বড় ফাটল তৈরি হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, ভবনটির দোতলায় এক্সরে কক্ষ, ইকোকার্ডিওগ্রাম কক্ষ, এন্ডোস্কোপি কক্ষ, ইসিজি কক্ষ, টয়লেট, রিসিপশন, রোগীদের বসার জায়গা, বারান্দাসহ প্রায় প্রতিটি দেয়ালের চিত্র একই। মিস্ত্রিরা ফাটলগুলো মেরামতের কাজ করছে।
জানা গেছে, এবারের বর্ষায় ছাদ চুইয়ে ফাটল বেয়ে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করেছে ভবনের ভেতরে। এতে করে পানি প্রবেশ করায় নষ্ট হয়ে গেছে এক্সরে রুমের একটি শীততাপ নিয়ন্ত্রণ মেশিন (এসি)। নতুন এই ভবনের এমন অস্বাভাবিক ফাটল দেখে হতবাক সকলেই, প্রশ্ন উঠেছে ভবনের স্থায়িত্ব নিয়ে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার ও গণপূর্ত বিভাগের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের যথাযথ তদারকির অভাবে ভবনের এই বেহাল দশা বলে অভিযোগ উঠেছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে জামালপুর গণপূর্ত বিভাগের অর্থায়নে এই ভবনটি নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন এবং কাজটি করেন স্থানীয় ঠিকাদার সোহরাব হোসেন বাবুল। ২০২২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ছয়তলা ভিতের দ্বিতল এই ভবনের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয় এবং গত ২০২৩ সালের জুলাই মাসে কাজ শেষ হয়। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
সেবা নিতে আসা সুমন নামে একজন জানান, আমি ইকো করাতে এসেছি। দেয়ালের অসংখ্য ফাটল দেখে আমি শঙ্কিত। আমি কখনও কোনো নতুন ভবনের এমন চৌচির অবস্থা দেখিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্মরত একজন টেকনিশিয়ান জানান, আগের পুরোনো ভবনই ভাল ছিল। আমরা যখন এই ভবনে কাজ শুরু করি তখন থেকেই ফাটল ছিল। ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখন খুবই ভয় হয়, হঠাৎ ভূমিকম্প হলে না জানি কী হয়।
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মুহা. মাহফুজুর রহমান সোহান জানান, নতুন এই ইনভেস্টিগেশন কাম স্টোর ভবনের কিছু জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে গণপূর্ত বিভাগকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। ভবনটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়নি বলে জানান তিনি।
ঠিকাদার সোহরাব হোসেন বাবুল কাজে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, কাজে কোনো ত্রুটি নেই। এরপরও কোনো সমস্যা হলে আমার জামানতের টাকা আছে। মেরামত করে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে মিস্ত্রিরা কাজ করছে। ইটের বদলে সিমেন্টের ব্লকে ভবন তৈরির জন্য এমন হয়েছে বলে জানান তিনি।
জামালপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, এগুলোকে বলা হয় সার্ফেস ক্র্যাক। দেয়াল কিংবা পিলার ফেটে যায়নি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অবহেলা থাকতে পারে বলে জানান তিনি।