মেয়েকে ঢাকার বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজে ভর্তি করানোর জন্য এসেছিলেন জামাল হোসেন সিকদার (৪০)। গত ২০ জুলাই শ্যালক তাওহিদ আহম্মেদকে সঙ্গে নিয়ে বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে মার্কেটে যাওয়ার পথে চিটাগাং রোডে দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
জানা যায়, পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে আর একমাত্র মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে প্রবাসে যাওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন দিনমজুর জামাল। কিন্তু কোটা আন্দোলনের সহিংসতায় গুলি বিদ্ধ হয়ে নিহত হন জামাল। নিহত জামাল বরিশালের গৌরনদী উপজেলার পূর্ব হোসনাবাদ গ্রামের মৃত মহসিন সিকদারের ছেলে।
নিহতের স্বজনরা জানান, জামাল ঢাকায় রং মিস্ত্রির কাজ করতেন। ঈদুল ফিতরের সময় বাড়িতে গিয়ে আর ঢাকায় ফেরেননি। পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে আর একমাত্র মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে প্রবাসে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। চলতি মাসেই তার সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সকালে নিহতের স্ত্রী শিউলি আফরোজ কালবেলাকে জানান, আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন জামাল। শুধু ফ্লাইটের তারিখ ঘোষণা বাকি ছিল। ঘটনার দিন বিকেলে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়ের জন্য বের হয়ে প্রবাসের যাওয়ার স্বপ্ন এক গুলিতেই শেষ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, স্বামীর স্বপ্ন ছিল বিদেশ গিয়ে ঋণ পরিশোধ করার পাশাপাশি মেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে উচ্চশিক্ষিত করবে। আমাদের সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। মেয়ের পড়ালেখা অনিশ্চিত জানিয়ে শিউলি বলেন, মানুষের ঋণ পরিশোধ কীভাবে করব এখন সেই দুশ্চিন্তায় আছি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, নদীভাঙনে স্বামীর বাড়িঘর হারিয়েছি। আর কোটা আন্দোলনের নামে সহিংসতায় স্বামীকে হারালাম। এখন আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। তাই মুলাদী উপজেলার নাজিরপুরে বাবার বাড়িতে আশ্রয়ে আছি। একমাত্র মেয়ের পড়ালেখার দায়িত্বভার গ্রহণ ও আর্থিক সহায়তা পেতে তিনি সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন।
গৌরনদী ইউএনও মো. আবু আবদুল্লাহ খান জানান, খোঁজখবর নিয়ে পরিবারটিকে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করা হবে।
মন্তব্য করুন