দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ভরা বর্ষাতেও বৃষ্টির দেখা না মেলায় পাট জাগ (পচানো) নিয়ে বিপাকে পড়েছেন উপজেলার চাষিরা। বর্তমান প্রচণ্ড খরায় পাট জাগ দিতে না পারায় পাট নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন পাটচাষিরা। তবে অবস্থাসম্পন্ন কৃষকরা এলাকার মাছ চাষের পুকুর ভাড়া নিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন। এতে বাড়তি খরচের মুখে পড়েছেন চাষিরা।
উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি পাট চাষ মৌসুমে উপজেলায় ৬০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তোষা ও দেশি জাতের পাট। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রতি হেক্টরে ১ দশমিক ৯ টন পাট।
উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের হরহরিয়ারপাড় গ্রামের পাট চাষি মতিউর রহমান বলেন, আমি ২০ শতক জমিতে পাট চাষ করি। কিন্তু এ বছর সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় ফসল খরায় নষ্ট হয়েছে। অবশিষ্ট যা রয়েছে তা অন্যের মাছ চাষের পুকুরে ভাড়া দিয়ে জাগ দিতে হচ্ছে। ২০ শতক জমির পাট জাগ দিতে বাড়তি ৫০০ টাকা দিতে হয়েছে। এদিকে পাট কাটতে ৪ জন শ্রমিককে দুই হাজার টাকা এবং জাগ তৈরি করতে ২ জন শ্রমিককে ৮০০ টাকা দিতে হচ্ছে। ভাড়া পুকুরটিতে ১৩ থেকে ১৫ দিন জাগ দিয়ে রাখতে হচ্ছে। ২০ শতক জমিতে মোট ৫ মণ পাট পাবেন বলে আশা করছেন ওই পাটচাষি।
অপর পাটচাষি নূর নবী ও আইনুল ইসলাম বলেন, খরার কারণে খাল-বিলে পানি না থাকায় এ বছর অনেকে বাধ্য হয়ে মাছ চাষের পুকুর ভাড়া নিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন। আবার অনেক চাষি বৃষ্টির অপেক্ষায় পাট কেটে ক্ষেতেই রেখে দিয়েছেন। আবার অনেকে পাট কাটছেন না। মধ্যমপাড়া গ্রামের পাটচাষি সন্তোষ রায় ও প্রিয় রঞ্জন রায় বলেন, তারা নদী পাড়ের বাসিন্দা হলেও সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এ বছর প্রায় সব ধরনের ফসল নষ্ট হচ্ছে। ফলন কম হচ্ছে। তাদের আবাদকৃত পাট নদীতে জাগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। ক্ষেতের পাট রক্ষা করতে বাধ্য হয়ে হরহরিয়ার পাড়ের অন্যের ডোবা ও পুকুর ভাড়া নিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন।
খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের মুক্তারপুর গ্রামের পাট চাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ৪২ শতাংশ জমিতে পাট চাষে বীজ, সার-কীটনাশক, সেচ ও শ্রমিক খরচ বাবদ ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার টাকা। এর সঙ্গে পাট জাগের খরচ অতিরিক্ত লাগছে। বর্তমান বাজার মূল্য প্রতিমণ ২ হাজার ২০০ টাকা। অর্থাৎ পাট চাষে এ বছর কোনোমতে উৎপাদন খরচ উঠলেও লাভ তেমন হবে না।
পুকুর মালিক মুক্তারপুর গ্রামের গোলজার হোসেন জানান, কৃষকদের অনুরোধে তিনি পাট জাগ দিতে নামমাত্র মূল্যে তার মাছ চাষের পুকুর ভাড়া দিয়েছেন। ডিজেল চালিত সেচযন্ত্র ব্যবহার করে পুকুরে পানি সংরক্ষণ করছেন।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহানুর রহমান বলেন, চলতি মৌসুমে পাটের ভালো ফলন হয়েছে। পাট পচানোর পানি না থাকায় চাষিরা কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন। দু-চার দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত হলে এ সংকট কেটে যাবে।
মন্তব্য করুন