পঞ্চগড় প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২৪, ০১:৫৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বাড়িতে খাবারের টাকা পাঠানো হলো না সাঈদের

বাড়ির বারান্দায় বসে নিহত সাঈদের স্ত্রী। ছবি : কালবেলা
বাড়ির বারান্দায় বসে নিহত সাঈদের স্ত্রী। ছবি : কালবেলা

‘আমার স্বামীর সঙ্গে কথা হয়েছে বৃহস্পতিবার। আমি খাবারের টাকা পাঠাতে বললে তিনি শুক্রবারে দিতে চান। পরদিন শুনি লোকজন বলছে আমার স্বামী সাঈদ নাকি মারা গেছে। আমি বিশ্বাসই করিনি তখন। লোকটা নাকি জুমার নামাজের পর গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।’ এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে স্বামীর মৃত্যুর ঘটনা বর্ণনা করছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নিহত আবু সাঈদের স্ত্রী।

আবু সাঈদের বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের প্রধানহাট এলাকায়। পেশায় তিনি একজন পানের দোকানি ছিলেন। ১৯ জুলাই কোটা আন্দোলনে সংঘর্ষের সময় ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।

সরেজমিনে আবু সাঈদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জীর্ণশীর্ণ মাটির দেওয়ালের বাড়ির দুটি ঘরে থাকেন সাঈদের পরিবার। সম্পদ বলতে ভিটেমাটির ১৫ শতক জমি। তাও আবার স্থানীয় কৃষি ব্যাংকে দায়বদ্ধ রয়েছে। ব্যাংক থেকে ৪৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে দোকান শুরু করেছিলেন সাঈদ। এখন সুদে আসলে ঋণের পরিমাণ প্রায় এক লাখ ২০ হাজার। পরিবারে ঋণের বোঝা রেখে চলে যান তিনি। এ অবস্থায় একমাত্র উপার্জনক্ষম অভিভাবক হারিয়ে দিশেহারা স্ত্রীসহ পরিবারের সদ্যরা। আবু সাঈদের স্ত্রী মাজেদা বেগম, মেয়ে শাহনাজ আক্তার ও ছেলে মামুন ইসলামকে নিয়ে ছিল সংসার। সাঈদের পাঠানো টাকায় কোনোমতে চলত সংসার।

জানা গেছে, প্রায় ১২ বছর আগে ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করেন আবু সাঈদ। বছর দুয়েক আগে মোহাম্মদপুরের বছিলা ৪০ ফিট এলাকায় ভাড়া নিয়ে পানের দোকান দেন তিনি। শুক্রবার (১৯ জুলাই) নামাজের পর দোকানের জন্য পলি ব্যাগ আনতে সড়কে বের হলে সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন তিনি। একপর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে সড়কেই পড়ে থাকে আবু সাঈদের নিথর দেহ। পরদিন প্রতিবেশীরা তার মরদেহ দাফনের জন্য পঞ্চগড়ে পাঠিয়ে দেন। পারিবারিকভাবে তাকে দাফন করা হয়।

নিহত আবু সাঈদের ছেলে মামুন ইসলাম বলেন, ঢাকায় সংঘর্ষের সময় বাবার মাথায় গুলি লেগেছিল। গুলি মাথার একপাশ দিয়ে ঢুকে আরেক পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। আমি এতিম হয়ে গেলাম।

নিহতের বড় ভাই শওকত আলী বলেন, ৫-৭ বছর ধরে ঢাকায় রিকশা চালায় খায়। শুনতাম এখানের সংসার আগে থেকে চালাত, এরপর ২-৩ বছর পর শুনলাম আমার ছোটভাই সেখানে আরেকটা সংসার করছে। বাড়িতে কিছু টাকা দিত। এখন দোকান করে পান বিক্রি করে বলে শুনেছি।

স্থানীয় বাসিন্দা মশিউর রহমান প্রধান বলেন, আবু সাঈদ আমার গ্রামবাসী এবং আমার পাশের বাড়ির, সম্পর্কে আমার ভাই হবে। সে জুমার নামাজের পর কোটা আন্দোলনের সময় সে রাস্তায় যায় দোকানের পলি আনতে।পরে তার মাথায় গুলি লাগে এবং সঙ্গে সঙ্গে সে মারা যায়।

বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিরাজুল হক বলেন, আবু সাঈদের পরিবার খুব দরিদ্র। ভিটেবাড়ি ছাড়া কোনো জায়গাজমি নেই। সে অনেক ভালো ছিল। তার রোজগারের টাকায় ছেলেমেয়ের লেখাপড়া, খাওয়াদাওয়া, ভরণপোষণ সবই সাঈদের সামান্য ইনকামে চলত।

বোদা থানা পুলিশের ওসি মোজাম্মেল হক বলেন, মরদেহ দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর আমরা বিষয়টি জানতে পারি। পরে জেনেছি আবু সাঈদ ঢাকায় দোকানি ছিলেন। তিনি কীভাবে মারা গেছেন জানি না। ময়নাতদন্ত বা আইনগত বিষয় কতটুকু কী হয়েছে তাও জানি না। তবে এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

বোদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহরিয়ার নজির বলেন, নিহত ব্যক্তির খোঁজখবর নিতে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো তথ্য জানা যায়নি এবং আমাদের কাছেও কোনো তথ্য জানতে চাওয়া হয়নি। পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো সাহায্য সহযোগিতার আবেদন করলে সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
ঘটনাপ্রবাহ: কোটা সংস্কার আন্দোলন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হবিগঞ্জে নির্ধারিত সময় শেষেও জমা পড়েনি ৩১টি অস্ত্র

নওগাঁয় দুই সাংবাদিককে তুলে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন

আহাজারি থামছেই না নিহত মাসুদের মায়ের

‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৪৯ শিক্ষককে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে’

রাজশাহীতে মাসুদ হত্যা নিয়ে আ.লীগের বিবৃতি

লাইফ সাপোর্টে মুস্তাফা মনোয়ার

দুঃসংবাদ দিল আবহাওয়া অফিস

শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার বিষয়ে ঢাবি শিক্ষকদের মতবিনিময় আজ

মেঘনার গর্ভে বিলীন ২০টি বাড়ি

রিমার্ক-হারল্যানে মেহেদী মিরাজকে উষ্ণ অভ্যর্থনা

১০

যুবদল নেতা নয়নকে অব্যাহতির বিজ্ঞপ্তি ভুয়া

১১

অফিস শেষে বাড়ি ফেরা হলো না হাসান-মাসুমের

১২

এক কমেন্টেই শিক্ষা জীবন শেষ নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীর 

১৩

বগুড়ায় ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে খুন

১৪

পাটগ্রাম সীমান্তে বিজিবির উদ্যোগে রাস্তা নির্মাণ

১৫

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে লাঞ্ছিত করলেন যুবদল নেতা

১৬

নেতাকর্মীদের প্রতি বিএনপির বিশেষ বার্তা

১৭

জোরপূর্বক প্রধান শিক্ষকের রুমে তালা, যুবদল-ছাত্রদল নেতা আটক

১৮

ট্রাক শ্রমিকের মৃত্যু / নোয়াখালীতে একরামুলসহ ৫৩ আ.লীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

১৯

তারেক রহমানের কর্মপরিকল্পনায় তারুণ্যের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেছে : প্রিন্স

২০
X