চলতি মৌসুমে নাটোরের গুরুদাসপুরে অর্থকরী ফসল পাটের ফলনে বিপর্যয় ঘটেছে। এ বছর পাট চাষের শুরুতেই তীব্র দাবদাহ এবং উপযুক্ত সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় গাছ বেড়েছে কম। অনেক চাষি সেচের মাধ্যমে পানি দিয়ে পাট চাষ করলেও আশানুরূপ গাছ বাড়াতে পারেনি। নির্দিষ্ট সময়ে চারা না গজানোর ফলে ফলন হয়েছে কম। কারও কারও জমির পাট দাবদাহে অনেকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে চাষিরা তাদের উৎপাদন খরচ ওঠা নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। এদিকে শুরু হয়েছে পাট কাটা ও জাগ (পচানো) দেওয়া।
চাষিরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর পাট চাষে খরচ বেড়েছে। সার, কীটনাশক ও শ্রমিক মূল্য বেড়েছে। গত বছর বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছিল ৮ থেকে ১০ মণ পর্যন্ত। এ বছর সেটা কমে হয়েছে ৫ থেকে ৬ মণ পর্যন্ত। বাজারমূল্য বাড়লে তবেই চাষিদের লোকসানের বোঝা কমবে। পাটে চাষে আগ্রহ হারাবেন তারা। এ জন্য বাজারে পাটের ন্যায্যমূল্য পেতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে জানা যায়, গত বছর জেলাতে পাট চাষ হয়েছিল ৩১ হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমি। এ বছর হয়েছে ২৮ হাজার ৬৪২ হেক্টর জমিতে। ফলে কমেছে ৩ হাজার ১০৩ হেক্টর জমির পাট চাষ । তবে গুরুদাসপুর উপজেলাতে বেড়েছে পাট চাষ। গত বছর ছিল ৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমি সেটা বেড়ে এ বছর হয়েছে ৪ হাজার ৫০ হেক্টর জমি। পাট চাষে আগ্রহ বাড়াতে ১৩০০ জন চাষিদের মধ্যে বিনামূল্যে পাট বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলাজুড়ে শুরু হয়েছে পাট কাটার উৎসব। চলনবিল অধ্যুষিত উপজেলার খুবজিপুর ইউনিয়নের কৃষি জমির চারদিকে দেখা মিলে চাষিদের পাট কাটা, ডোবা-নালা ও চলনবিলে পাট জাগ দেওয়া এবং পানিতে পাটকাঠি হতে আঁশ আলাদা করানোর দৃশ্য। অনেককে দেখা যায়, রোদে পাট ও শলাকা শুকাতে। কাঙ্ক্ষিত পাট ঘরে তুলতে চাষিদের চলছে যেন বিশাল কর্মযজ্ঞ।
টিটু, রিপন মন্ডল ও মিজুসহ কয়েকজন পাট চাষি আক্ষেপ করে কালবেলাকে জানান, জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে পাট ঘরে তুলতে বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ১৬ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা। আর এ বছর প্রচণ্ড দাবদাহে ফলন কমে বিঘা প্রতি পাট হয়েছে ৫ মণ থেকে ৬ মণ। বর্তমান বাজারে ভালো মানের পাট বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৩ হাজার ২০০ টাকা আর নিম্নমানের পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। এতে বাজার দর বেশি না হলে লোকসান হবে, আগ্রহ হারাবে চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হারুনুর রশিদ কালবেলাকে জানান, এ বছর প্রচণ্ড খরতাপে পাটের ফলন কিছুটা কম হয়েছে। বাজারে বাড়বে পাটের দাম। খরচ পুষিয়ে লাভবান হবেন চাষিরা এমনটাই মনে করেন তিনি।