প্রায় সাত মাস আগে সাদিয়া আক্তারকে বিয়ে করেন নূরে আলম সিদ্দিকী রাকিব। স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় আনন্দের সীমা ছিল না স্বামী রাকিবের। অনাগত সন্তানের মুখ দেখতে অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সন্তানের মুখ দেখার আগেই গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান রাকিব।
গত ২০ জুলাই কোটা আন্দোলনকে ঘিরে ময়মনসিংহের গৌরীপুরের কলতাপাড়া বাজারে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে রাকিব গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ওইদিনই হাসপাতাল থেকে রাকিবের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে দাফন করেন স্বজনরা।
রাকিবের বাড়ি উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের দামগাঁও গ্রামে। তার বাবা আব্দুল হালিম শেখ। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রাকিব ছিলেন তৃতীয় সন্তান।
পরিবারের দাবি, ‘রাকিব কোনো রাজনীতি করত না। কোটা আন্দোলনেও সম্পৃক্ত ছিল না। ঘটনার দিন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর জন্য ওষুধ আনতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার এমদাদুল উলুম নূরানিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা থেকে হেফজ সম্পন্ন করেন রাকিব। এরপর নিজ বাড়িতেই গড়ে ওঠা তালিমুল কুরআন মহিলা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি ভর্তি হন ঈশ্বরগঞ্জের ভাসা আতহারিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসায় কিতাব বিভাগে।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি রাকিব বিয়ে করেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সাদিয়া আক্তারকে। তার স্ত্রী বর্তমানে চারমাসের অন্তঃসত্ত্বা।
রাকিবের চাচাতো ভাই আব্দুল মালেক বলেন, ‘ঘটনার দিন সকালে সাদিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থতা বোধ করছিলেন। এসময় রাকিব তার স্ত্রীর জন্য ওষুধ আনতে কলতাপাড়া বাজারে যান। শুনেছি সেখানে সংঘর্ষের ঘটনা মোবাইলে ভিডিও করার সময়ই সে গুলিবিদ্ধ হয়। সেখান থেকে হাসপাতালের নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।
রোববার বিকেলে দামগাঁও গ্রামে গিয়ে দেখা দেখা যায়, সুনশান নীরবতা রাকিবের বাড়িতে। তার বাবা আব্দুল হালিম শেখ বাড়িতে নেই। তিনি পুত্রবধূ সাদিয়াকে ডাক্তার দেখানোর জন্য ময়মনসিংহ নিয়ে গেছেন। ছেলে হারানোর শোকে স্তব্ধ মা নুরুন্নাহার বেগম। কারও সঙ্গে কথা বলছেন না।
ছেলের কথা বলতেই ডুকরে কেঁদে বললেন, ‘বিয়ের নিমন্ত্রণে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলাম। গত শুক্রবার বিকালে ছেলে ফোন করে বলে তুমি চলে এসো। পরের দিন বাড়ি ফিরেই ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পাই। আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করত না। কেনো তাকে গুলি করে মারা হলো। সৃষ্টিকর্তার কাছে বিচার দিয়ে রাখলাম।’
রাকিবের ভগ্নিপতি ইলিয়াস মাহমুদ বলেন, ‘রাকিবের মরদেহের বুকের বাম পাশে গুলির ছিদ্র ছিল। ও ছিল আমার শ্বশুরের একমাত্র ছেলে। তার মৃত্যুতে পুরো পরিবার শোকে কাতর। আমরা এ ঘটনায় মামলা করব না। মামলা করলেই কি আর রাকিব ফিরে আসবে।’
মন্তব্য করুন