মাদারীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৪, ০৪:২৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘কী দোষ ছিল আমার মানিকের, গুলি খাইয়া মরতে হইল’

নিহত নাজমুল। ছবি : কালবেলা
নিহত নাজমুল। ছবি : কালবেলা

‘আমার তো একটাই মানিক আছিল। কষ্ট কইরা মানুষ করলাম, পড়াইলাম, লেখাইলাম, এখন কী পাইলাম। কী দোষ ছিল আমার মানিকের, গুলি খাইয়া মরতে হইল। আমি ক্যামনে বাঁচমু, হায় আল্লাহ।’ এভাবেই বিলাপ করে কাঁদছিলেন বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলিতে নিহত নাজমুলের মা নাজমা বেগম।

নিহত নাজমুল (২১) কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার চাপাতলি এলাকার সৈয়দ আবুল কায়েসের ছেলে। তবে তিনি মায়ের সঙ্গে নানাবাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার চরগোবিন্দপুর উত্তরকান্দি গ্রামের মাতুব্বর বাড়িতে থাকতেন। কাজের সুবাধে মায়ের সঙ্গে ঢাকায় বসবাস করতেন।

দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে রাজধানীর বনশ্রী এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করেন নাজমা বেগম (৪৫)। ছেলে নাজমুল হাসান পড়ালেখার পাশাপাশি ওই হাসপাতালে খণ্ডকালীন চাকরি করতেন। মা-ছেলের আয়ে চলত সংসার। গত ১৯ জুলাই দুপুরে নাজমুল কর্মস্থল বনশ্রী ফরাজি হাসপাতালে যাওয়ার সময় গুলিতে নিহত হন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯ জুলাই দুপুরের খাবার খেয়ে নাজমুল আফতাবনগর থেকে বনশ্রী ফরাজি হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। হাসপাতালে খণ্ডকালীন ফিজিওথেরাপিস্ট ছিলেন তিনি। সেই দিন ব্যাপক সংঘর্ষ চলছিল। নাজমুল সংঘর্ষ এড়াতে গুদারাঘাট এলাকা দিয়ে হেঁটে বনশ্রীর দিকে যাচ্ছিলেন। গুদারাঘাট সেতুতে ওঠার পর গুলিবিদ্ধ হন। তাকে উদ্ধার করে গুদারাঘাট এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান কয়েকজন পথচারী। ওই দিন সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ওই দিন রাতেই তার লাশ অ্যাম্বুলেন্সে নানাবাড়ি মাদারীপুরে আনা হয়। পরের দিন জানাজা শেষে নানা আব্দুর রহমান মাতুব্বরের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ঘরের ভেতরে নির্বাক হয়ে বসে আছেন নাজমা বেগম। বাসায় কেউ গেলেই হাউমাউ করে কান্নাকাটি করছেন। প্রতিবেদককে দেখেই হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি। ছেলের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নির্মম ঘটনা স্মরণ করে বিলাপ করতে থাকেন। মেয়ে ও জামাতা সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলেন।

কান্না করতে করতে তিনি বললেন, আমি ক্যামনে এ যন্ত্রণা সহ্য করব। আমার তো একটাই মানিক আছিল। আমার এ সন্তান ছাড়া তো আর কেউ নাই। কষ্ট কইরা মানুষ করলাম, পড়াইলাম, লেখাইলাম, এখন কী পাইলাম। কী দোষ ছিল আমার মানিকের, গুলি খাইয়া মরতে হইলো। আমি ক্যামনে বাঁচমু, হায় আল্লাহ। বাবজান আমারে কইতো, মা তোমার আর কষ্ট করতে হবে না। আমি টাকা জমিয়ে বিদেশ যাব, আপু চাকরি করবে, তোমার আর কষ্ট থাকবে না।

নাজমুলের বড় বোন তানজিলা আক্তার বলেন, ভাই চাকরি করে আমাকেও লেখাপড়ার কাজে সহযোগিতা করতেন। ভাইকে যে এভাবে মরতে হবে, এটা এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না। বুকের ভেতরটায় যে কী হচ্ছে, তা কাউকে বোঝাতে পারব না। আমার ভাইকে কেন গুলি করে মারা হলো, এটার বিচার আল্লাহ ছাড়া কার কাছে দেব?

মামা সাইদুল মাতুব্বর বলেন, আমার ভাগ্নে ও ভাগ্নি দুজন। নাজমুল কাজ করত হাসপাতালে। তার আয় দিয়েই সে পড়ালেখা করত। আল্লায় ওরে নিয়া গেল। এখন ভাগ্নিটার পড়ালেখা কেমনে চলব আর সংসারটাই যে কেমনে চলবে জানি না।

স্থানীয় ইউপি সদস্য বাদল বেপারী বলেন, সে যদি সত্যিই হাসপাতালে চাকরি করে থাকে এবং তার পরিবার প্রমাণ হিসেবে কাগজপত্র দেখাতে পারে, তাহলে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করব। প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন নেতাদের থেকেও সহযোগিতা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যশোরে বিএনপি অফিস ভাঙচুর, আ.লীগের ৬৩ নেতাকর্মীর নামে মামলা

হবিগঞ্জে নির্ধারিত সময় শেষেও জমা পড়েনি ৩১টি অস্ত্র

নওগাঁয় দুই সাংবাদিককে তুলে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন

আহাজারি থামছেই না নিহত মাসুদের মায়ের

‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৪৯ শিক্ষককে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে’

রাজশাহীতে মাসুদ হত্যা নিয়ে আ.লীগের বিবৃতি

লাইফ সাপোর্টে মুস্তাফা মনোয়ার

দুঃসংবাদ দিল আবহাওয়া অফিস

শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার বিষয়ে ঢাবি শিক্ষকদের মতবিনিময় আজ

মেঘনার গর্ভে বিলীন ২০টি বাড়ি

১০

রিমার্ক-হারল্যানে মেহেদী মিরাজকে উষ্ণ অভ্যর্থনা

১১

যুবদল নেতা নয়নকে অব্যাহতির বিজ্ঞপ্তি ভুয়া

১২

অফিস শেষে বাড়ি ফেরা হলো না হাসান-মাসুমের

১৩

এক কমেন্টেই শিক্ষা জীবন শেষ নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীর 

১৪

বগুড়ায় ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে খুন

১৫

পাটগ্রাম সীমান্তে বিজিবির উদ্যোগে রাস্তা নির্মাণ

১৬

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে লাঞ্ছিত করলেন যুবদল নেতা

১৭

নেতাকর্মীদের প্রতি বিএনপির বিশেষ বার্তা

১৮

জোরপূর্বক প্রধান শিক্ষকের রুমে তালা, যুবদল-ছাত্রদল নেতা আটক

১৯

ট্রাক শ্রমিকের মৃত্যু / নোয়াখালীতে একরামুলসহ ৫৩ আ.লীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

২০
X