জ্বালানি তেলের অভাবে প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবা কার্যক্রম।
এ ছাড়া অ্যাম্বুলেন্সচালক রুবেল মিয়ার বিরুদ্ধে জ্বালানি তেলের হিসাবে গরমিল, রোগী ও স্টাফদের সঙ্গে অসদাচরণসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এদিকে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে উপজেলার গরিব ও দুস্থ রোগীদের।
দীর্ঘদিন সরকারি অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ হওয়ায় প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সগুলোতে বাড়তি ভাড়া দাবি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাধ্য হয়ে রোগীর স্বজনরা দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগীদের মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিতে হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত বছরে মোট ৬৩৬ জন রোগী বহন করে অ্যাম্বুলেন্স। এতে সরকারের রাজস্ব ফান্ডে অর্থ জমা হয়েছে মোট ২ লাখ ৮৫ হাজার ২০০ টাকা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রোগী নিয়ে মৌলভীবাজার জেনারেল হাসপাতাল পর্যন্ত সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া ৪৫০ টাকা হলেও উপজেলার বেশ কয়েকজন রোগীর কাছ থেকে অ্যাম্বুলেন্সচালক রুবেল নিয়েছেন দিগুণ ভাড়া।
এ ছাড়া চলতি বছরে জুলাই মাসে মৌলভীবাজার রেফার করা এক রোগীর পরিবার ও স্বজনরা হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবা না পাওয়ায় রোগী মারা যাওয়াকে কেন্দ্র করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, ওয়ার্ডবয়কে শারীরিককভাবে লাঞ্ছিত করে এবং হাসপাতালের দরজা, জানালা টেবিল ভাঙচুর করে। শহরতলীর মুসলিমবাগ এলাকার বাসিন্দা আশিক আবেদীন বলেন, গত বছর আমার ভাইকে শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মৌলভীবাজার হাসপাতালে পাঠালে শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যাই। এ সময় সরকারি অ্যাম্বুলেন্সচালককে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে ৮৫০ টাকা বেশি দিতে হয়েছে।
ভোগান্তির বিষয়ে উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের জমির মিয়া বলেন, শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আমার ছেলেকে মৌলভীবাজার জেনারেল হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসক। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ। পরে বাধ্য হয়ে দুই হাজার ২০০ টাকা দিয়ে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে নিয়ে যাই। শ্রীমঙ্গল উপজেলার শাহিবাগ গ্রামের বাসিন্দা তৈয়ব আলী বলেন, সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে রোগীকে মৌলভীবাজার নিয়ে গেছি। এতে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চেয়ে ১ এক হাজার ৩০০ টাকা ভাড়া বেশি লেগেছে। তেলের কারণে হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চলাচল বন্ধ থাকবে এমনটা মেনে নেওয়া যায় না।
শ্রীমঙ্গলে একটি প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সচালক বিল্লাল হোসেন বলেন, বর্তমানে অকটেন তেল ১৩৫ টাকা লিটার। বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। তাছাড়া একেকটা গাড়ির দাম ১২-১৬ লাখ টাকা। তেলের দাম বৃদ্ধির পর ভাড়া কিছু বাড়ানো হয়েছে। তবে দুই হাজারের বেশি নেওয়ার কথা নয়।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সেচালক মো. রুবেল মিয়া বলেন, ১ জুন মাসের তারিখ থেকে জ্বালানি তেলের অভাবে অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ রয়েছে। পেট্রোল পাম্প বাকিতে তেল দিচ্ছে না, তাই অ্যাম্বুলেন্সটি গ্যারেজবন্দি। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগুলো মিথ্যা।
তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান শহরের স্টেশন রোডের সৈয়দ মাসউদুর রহমান ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার চন্ডিপদ আচার্য্য বলেন, আমরা ২০২৩ সালের নভেম্বর মাস থেকে জুন মাস পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষের কাছে অ্যাম্বুলেন্সের জ্বালানি তেল বাবত ৫ লাখ ১১ হাজার ৫৬৫ টাকা পাই। তেলের বকেয়া পাওনা পরিশোধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে আমরা তেল সরবরাহ বন্ধ রেখেছি। আমরা ৮ জুলাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরীর বরাবর বকেয়া বিলগুলো দ্রুত পরিশোধ করার জন্য একটি চিঠিও দিয়েছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, গত অর্থ বছরে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুই কিস্তিতে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা শেষ হয়ে যায়। আর পেট্টল পাম্পে এর আগের অর্থবছরের কিছু বকেয়া ছিল তাও পরিশোধ করা হয়েছে। এ বিষয়টি সিভিল সার্জনকে জানানা হয়েছে।
অ্যাম্বুলেন্সচালক রুবেলের বিভিন্ন অনিয়মের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তেলের হিসাবে গড়মিল, দ্বিগুণ ভাড়া, অসদাচরণসহ অন্যান্য বিষয়ে আমার কাছে অনেকেই মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। আমি সিভিল সার্জনকে অবহিত করেছি। করোনাকালে তার বিরুদ্ধে এসব বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হয় এবং পরে তা প্রমাণিত হয়। পরে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়েছিল।
মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ কালবেলাকে বলেন, চলতি অর্থবছরে শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সম্ভবত ১২ লাখ টাকা তেলের বরাদ্দ ছিল। নতুন অর্থ বছরের আগেই তেলের বরাদ্দের টাকা খরচ হয়ে যাওয়ায় তেল সংকটে অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ রয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে অর্থছাড়ের প্রক্রিয়া চলছে।
মন্তব্য করুন