বশির হোসেন, খুলনা
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

খুমেকে প্রশাসনিক অচলাবস্থায় বিপর্যস্ত স্বাস্থ্যসেবা

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ব্লকের মাঝে ময়লার স্তূপ
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ব্লকের মাঝে ময়লার স্তূপ

৯ জুলাই থেকে পরিচালক অফিস করেননি। উপপরিচালক বদলি হয়েছেন গত সপ্তাহে। তত্ত্বাবধায়ক প্রথম থেকেই অফিসে অনিয়মিত। ফলে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে প্রশাসনিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে সময়মতো টেন্ডার কার্যক্রম শুরু না করায় এক মাস ধরে হাসপাতালে নেই তিন শতাধিক আউটসোর্সিং কর্মী। ফলে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হওয়া খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিপর্যস্ত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সাল থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আলাদা চারটি লটে ৩০৭ জন আউটসোর্সিং কর্মচারী কাজ করে আসছিলেন, যাদের মেয়াদ শেষ হয় এ বছরের ৩০ জুন।

নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে অন্তত তিন মাস আগে থেকে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করার নিয়ম রয়েছে। তবে রহস্যজনকভাবে এ কার্যক্রম শুরু না করে গোপনে একই ঠিকাদারকে মেয়াদ বৃদ্ধি করার জন্য প্রয়োজনীয় চিঠি সরবরাহ করে হাসপাতাল প্রশাসন।

সময়মতো মেয়াদ বৃদ্ধি বা টেন্ডার কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় বর্তমানে হাসপাতালে কোনো আউটসোর্সিং কর্মচারী নেই। ফলে তিন শতাধিক কর্মচারী শূন্যতায় হাসপাতালের চারদিক ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। সরেজমিনে হাসপাতালের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে দেখা যায়, প্রতিটি ব্লকের মধ্যবর্তী জায়গা ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। দুর্গন্ধে রোগীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ ছাড়া বহির্বিভাগ অপারেশন থিয়েটারসহ বিভিন্ন স্থানে আউটসোর্সিং কর্মচারীরা ঠিকমতো না আসার কারণে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে বিপর্যস্ত অবস্থা।

হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আসলাম শেখ নামে এক রোগী কালবেলাকে বলেন, টাকা-পয়সা নেই, সেজন্য সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি; কিন্তু এখানে আসার পর আলট্রাসনোগ্রাম, এক্স-রে, প্যাথলজি পরীক্ষা ও ক্যাথেটার পরাতে হাজার টাকা শুধু আউটসোর্সিং কর্মচারীদের দিতে হয়েছে। টাকা ছাড়া তারা কোনো কাজ করেন না।

সার্জারি, গাইনি, নিউরো মেডিসিন বিভাগে একাধিক রোগীর সঙ্গে কথা বলে একই অভিযোগ পাওয়া গেছে। হাসপাতালের আউটসোর্সিং ঠিকাদার হেমায়েত হোসেন ফারুক বলেন, হাসপাতালে বর্তমানে কোনো আউটসোর্সিং কর্মচারী নেই। যারা আগে করেছেন, তারাই এখন কাজ করছেন। যেহেতু হাসপাতালের সঙ্গে কোনো ধরনের চুক্তি এখনো হয়নি, তাই কোনো কর্মচারীকে কাজের জন্য বাধ্য করা যাচ্ছে না।

তবে গত মার্চে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেয়াদ বৃদ্ধির চিঠি ইস্যু করায় নিয়মমাফিক তা মন্ত্রণালয় থেকে পাস হয়ে এসেছে। এখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চাইলে চুক্তিভিত্তিক ২০৬ কর্মচারীকে ফের কাজে লাগাতে পারবে। পরিচালক বা উপপরিচালক যিনিই ডিডিওশিপ কর্মকর্তা থাকুন, তিনিই চুক্তিসম্পন্ন করে ফের আউটসোর্সিংয়ের কর্মচারী নিয়োগ দিতে পারবেন। কিন্তু উপপরিচালক বদলির পর কোনো ডিডিওশিপ কর্মকর্তা না থাকায় নতুন করে ডিডিওশিপ কর্মকর্তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর হাসপাতালের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর পরিচালক ও উপপরিচালকের বৈঠকের পর ১০ জুলাই ৭ দিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে যান পরিচালক ডা. গৌতম কুমার পাল; কিন্তু ছুটি শেষ হলেও তিনি আর হাসপাতালে আসেননি।

হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক ও কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বর্তমান পরিচালক ডা. গৌতম কুমার পাল খুলনায় চাকরি করতে চান না। তাই নিজের বদলি করাতে ঢাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

এদিকে উপপরিচালক ১৭ জুলাই ঝিনাইদহ মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলে (ম্যাটস) অধ্যক্ষ হিসেবে বদলির পর তাড়াহুড়া করে পরের দিনই বিদায় নেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে। ফলে প্রশাসনিক শূন্যতা তৈরি হয় দক্ষিণ বঙ্গের সর্ববৃহৎ এই হাসপাতালটিতে।

বুধবার চূড়ান্তভাবে ছাড়পত্র নেওয়ার সময় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে উপপরিচালকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. আক্তারুজ্জামান। তবে ২ মাস আগে তত্ত্বাবধায়কের পদে যোগদান করলেও হাসপাতালে নিয়মিত হননি তিনি।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে ফোন দিলে জানা যায়, তিনি বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চাকরিতে যোগদানের ব্যাপারে কোনো উত্তর দেননি তিনি।

উপপরিচালক ডা. হুসাইন শাফায়াত কালবেলাকে বলেন, বেশ কিছুদিন এখানে চাকরি করলাম। সরকারি চাকরিতে বদলিটা নিয়মিত ব্যাপার। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল তো নিশ্চই ফাঁকা থাকবে না। সরকার যাকে যোগ্য মনে করবে, তাকে সেখানে দায়িত্ব দেবে। তিনি দায়িত্ব পালন করবেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রৌমারীতে ব্যবসায়ীদের আহ্বায়ক কমিটির শপথ অনুষ্ঠিত

৬৫ ভরি স্বর্ণ ছিনিয়ে নেয়ায় মামুনের বিরুদ্ধে যুবদলের মামলা

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

ক্ষমা পেয়ে আমিরাত থেকে ১২ জন ফিরছেন চট্টগ্রামে

‘ছাত্র জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকার দুই ভাবে পরাজিত’

মহানবীকে (সা.) কটূক্তিকারী সেই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা

শিবচর আঞ্চলিক সড়কে গ্রামবাসীর বৃক্ষরোপণ

মাদ্রাসাছাত্রকে বলাৎকার চেষ্টার অভিযোগ ধামাচাপা, ৭ দিন পর ফাঁস

১২ দিনেও মেলেনি রানীনগরে নিখোঁজ নার্গিসের সন্ধান

দায়িত্বশীলদের নিয়ে সাতক্ষীরায় ছাত্র শিবিরের সমাবেশ

১০

আযহারী শিক্ষার্থীরা হবে বাংলাদেশ ও মিশরীয় ঐতিহ্যের সেতুবন্ধন : মিশরীয় রাষ্ট্রদূত

১১

রাজশাহীতে বস্তাভর্তি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার

১২

আন্দোলনের ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ কর্মীকে গণধোলাই

১৩

আশুলিয়ায় গার্মেন্টস শ্রমিক অসন্তোষ ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে শ্রমিক সমাবেশ

১৪

কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি

১৫

পাকিস্তানের জলসীমায় বিপুল তেল-গ্যাস মজুতের সন্ধান

১৬

বিসিবির দুর্নীতির তদন্ত দাবি সাবেকদের

১৭

পাবিপ্রবি ছাত্রলীগ কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ

১৮

জেল খেটেছি তবু শেখ হাসিনার মতো পালিয়ে যাইনি : সাবেক এমপি হাবিব

১৯

বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট নেতার দাওয়াতে গিয়ে বিপাকে জাসাস নেতা

২০
X