ভোলার দৌলতখানে সৈয়দপুর জুনিয়র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী কর্মচারীকে কুপ্রস্তাব দেওয়াসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার সৈয়দপুর জুনিয়র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।
জানা যায়, নারী কর্মচারীকে কুপ্রস্তাব, নিয়োগবাণিজ্য, জাতীয় পতাকা অবমাননা, অর্থ আত্মসাৎ, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকদের সঙ্গে অসদাচরণসহ নানা অভিযোগ ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী নাজমা বেগম জানান, প্রধান শিক্ষক আমার কাছে ২ লাখ টাকা চেয়েছেন। টাকা না দেওয়ায় আমার ইজ্জত কেড়ে নিতে চান। স্কুল ছুটির পর আমাকে বিভিন্নভাবে কুপ্রস্তাব দেন, এতে আমি রাজি না থাকায় চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেন।
অফিস সহকারী ইব্রাহিম জানান, ১ বছর আগে যখন এ স্কুলে নিয়োগ হয় তখন প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, চাকরি নিতে হলে ৭ লাখ টাকা লাগবে। আমার বাবা গরিব কৃষক, আমি মোটামুটি পাঁচ লাখ ৭০ হাজার টাকা জোগাড় করে তাকে দেই; এতে চাকরিটা হয়। ১ বছর ধরে ডিউটি করে আসছি, এখন পর্যন্ত আমার চাকরির কাগজপত্র বুঝে পাইনি। কাগজপত্রের কথা জিজ্ঞেস করলে আমাকে গালমন্দ করেন।
অফিস সহকারী মামুন জানান, আমি স্কুলে এক বছর ধরে চাকরি করছি। নিয়োগ চলাকালীন সময় প্রধান শিক্ষক আমার কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা চেয়েছিলেন। আমি আমার সব জায়গাজমি বিক্রি করে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছি। এখন চাকরি হওয়ার পর উনি আমাকে কাজেকর্মে গালমন্দ করেন এবং মারধর করেন।
অফিস সহকারী শাহাবুদ্দিন জানান, আমি যখন ১৫ আগস্ট স্কুলে পতাকা টানাই ওই সময় সালাউদ্দিন স্যার তিক্ততার সঙ্গে আমার হাত থেকে পতাকাটা কেড়ে নিয়ে চেয়ার ও টেবিল মুছে ছিলেন। সব শিক্ষক সেখানে উপস্থিত ছিলেন । পরে আমি বিষয়টি স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটিকে জানিয়েছি।
এক অভিভাবক জানান, আমি আমার মেয়েকে নিয়ে উপবৃত্তির জন্য স্যারের কাছে গেলে স্যার জানান ৫০০ টাকা দিলে উপবৃত্তি পাওয়া যাবে। আমি তাকে ৫০০ টাকা জোগাড় করে দেই। আমার মেয়ের উপবৃত্তির টাকা এলে স্যার সে টাকা আত্মসাৎ করে ফেলে। পরে আমি রাগ করে মেয়ের পড়ালেখা বন্ধ করে বিয়ে দিয়ে দিয়েছি।
বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, প্রধান শিক্ষক কখনো অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন না। জাল জালিয়াতির মাধ্যমে স্কুলের অনেক টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আমাদের সঙ্গে ও ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতেন। এছাড়া টাইমস্কেল করে দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকদের থেকে টাকা দাবি করে আসছিলেন।
স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ও ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মুনশি ওবায়েদুল্লাহ রতন বলেন, স্কুল পরিচালনায় সে অদক্ষ, স্বার্থপর ও লোভী। তার বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকার অবমাননা, নিয়োগবাণিজ্য, উপবৃত্তির টাকা না দেওয়া, মহিলা কর্মচারীকে কুপ্রস্তাব দিয়ে নিজের রুমে ডেকে নিয়ে গায়ে হাত দেওয়া, ছাত্রীদের গালে হাত দেওয়াসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে স্কুল পরিচালনা কমিটি রেগুলেশন করে তাকে সাসপেন্ড করেছে।
প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
মন্তব্য করুন